জবি প্রতিনিধি:
তরুণ প্রজন্মকে যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্যে মানসিকভাবে তৈরি করা এবং তাদেরকে মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল করে তোলার পাশাপাশি আঁচল ফাউন্ডেশনের একটি অন্যতম লক্ষ্য দেশে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার হার শূণ্যের কোঠায় নামিয়ে আনা। তারই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি এটি তরুণ প্রজন্মের উপর জরিপ পরিচালনা ও আত্মহত্যার তথ্যও সংগ্রহ করে যেন তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যের সার্বিক অবস্থা নিরূপণ করা যায়। সেই সূত্র ধরে দেশের দেড়শত জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকা এবং অনলাইন পোর্টাল থেকে এবারের সকল প্রকার আত্মহত্যার তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। সমীক্ষার তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালের প্রথম আট মাসের আত্মহত্যার সংখ্যা আমাদের জন্য উদ্বেগ তৈরি করতে সক্ষম। এ বছরে প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ৪৫ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। দীর্ঘ আট মাস ব্যাপী চলমান ডাটা সমন্বয়ের নানাবিধ উল্লেখযোগ্য ফলাফল ৯ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) সকাল ১১টায় ভার্চুয়ালি সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন আঁচল ফাউন্ডেশনের ফারজানা আক্তার লাবনী।
পত্রিকা থেকে সংগৃহীত আত্মহত্যার ঘটনা সংখ্যা অনুযায়ী, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাসের মধ্যে ৩৬৪ জন আত্মহননের পথ বেছে নেয় যারা তাদের জীবদ্দশায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত ছিলেন। এদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল, মাদ্রাসা, নার্সিং প্রভৃতি বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার্থী রয়েছেন। লক্ষ্যণীয় যে, ৩৬৪ জন আত্মহত্যাকারীর মধ্যে ১৯৪ জনই ছিলেন স্কুলগামী শিক্ষার্থী। দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন কলেজ শিক্ষার্থীরা যার সংখ্যা ৭৬ জন। অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহননকারীর সংখ্যা ৫০ জন। তবে মোট আত্মহননকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীও ছিলেন ৪৪ জন।
সমীক্ষায় উঠে আসে বিগত আট মাসে মোট আত্মহননকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৫০ জন ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী, যাদের মধ্যে পুরুষ শিক্ষার্থী ৬০.০০ শতাংশ এবং নারী শিক্ষার্থী ৪০.০০ শতাংশ। কলেজপড়ুয়াদের মধ্যে ৭৬ জন এই পথ বেছে নেয় যাদের মাঝে ৪৬.০৫ শতাংশ পুরুষ এবং ৫৩.৯৫ শতাংশ নারী। সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ১৯৪ জন স্কুলগামী শিক্ষার্থী বিগত আট মাসে আত্মহত্যার দিকে ধাবিত হয়েছে। তাদের মধ্যে ৩২.৯৯ শতাংশ পুরুষ এবং ৬৭.০১ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী। এমনকি মাদ্রাসায় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও আত্মহত্যার মাধ্যমে জীবনাবসানের পথ বেছে নিয়েছে যা সংখ্যায় ৪৪ জন। তাদের মধ্যে ৩৯.২৯ শতাংশ পুরুষ এবং ৬০.৭১ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী।
আত্মহত্যাকারীদের অবস্থান বিবেচনায় সবার শীর্ষে রয়েছে রাজধানী ঢাকা। আত্মহননকারীদের মধ্যে ঢাকায় গত ৮ মাসে শতকরা ২৫.২৭ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন। চট্টগ্রাম বিভাগে ১৬.৪৮ শতাংশ এবং খুলনা বিভাগে ১৪.০১ শতাংশ আত্মহত্যা করে। দেশের অপরপ্রান্তে রংপুর বিভাগে আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থী রয়েছেন ৮.৭৮ শতাংশ। এছাড়া বরিশাল বিভাগে ৯.৬২ শতাংশ, ময়মনসিংহ বিভাগে ৭.৪২ শতাংশ এবং রাজশাহী বিভাগে ১৪.০১ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। অপর দিকে, সিলেট বিভাগে তুলনামূলকভাবে কম সংখ্যক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন যা ৪ শতাংশ।
শিক্ষাস্তর বিবেচনায়, বিদ্যালয়গামী অর্থাৎ প্রাইমারি থেকে মাধ্যমিক পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রী আত্মহত্যা করেন ৫৩.৩০ শতাংশ। আত্মহত্যার দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা যা ২০.৮৮ শতাংশ। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থী রয়েছে ১৩.৭৪ শতাংশ। আত্মহননকারীদের মধ্যে মাদ্রাসার শিক্ষার্থী রয়েছেন শতকরা ১২.০৯ শতাংশ। টিনেজারদের মধ্যে আত্মহত্যার হার বেড়ে যাওয়া আমাদের জন্য অশনি সংকেত।
৯ই সেপ্টেম্বর( শুক্রবার) আঁচল ফাউন্ডেশন আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের বিষয়বস্তু ছিল বেড়েই চলেছে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার হার; আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়া কতটা জরুরী?- শীর্ষক সমীক্ষায় সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরি, নারায়ণগঞ্জ জেলার এডিসি (শিক্ষা ও আইসিটি ডিভিশন) আজিজুল হক মামুন, এবং আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ সহ প্রিন্ট ও ইলেকট্রিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।
caller_get_posts
is deprecated. Use ignore_sticky_posts
instead. in /home/somoynewsbd/public_html/wp-includes/functions.php on line 5667caller_get_posts
is deprecated. Use ignore_sticky_posts
instead. in /home/somoynewsbd/public_html/wp-includes/functions.php on line 5667
Leave a Reply