-মাহবুব করিম
পদ্মশ্রী ড. টি.কে. লাহিড়ী (ডঃ তপন কুমার লাহিড়ী) উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সাথে তার বাড়িতে দেখা করতে অস্বীকার করেছেন।
বারাণসীর যে সব বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে যোগীর দেখা করার ছিল, তাদের মধ্যে একজন ছিলেন ডঃ টি কে লাহিড়ী। দেখা করানোর জন্য যে সব অফিসার নিয়োগ করা হয়েছিল যোগীর কাছ পর্যন্ত পৌঁছানোর দায়িত্বে তাদের ডাক্তার লাহিড়ী বলেন যে দেখা করতে হলে যোগীকেই আসতে বলুন আমার ওপিডিতে …….
এর পর মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার কর্মসূচি স্থগিত করা হয়। এখন বলা হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী চাইলে তাঁর ওপিডিতে ডাঃ লাহিড়ীর সঙ্গে দেখা করতে পারতেন। কিন্তু ভিভিআইপিরা গেলে সেখানে রোগীদের অসুবিধার সৃষ্টি হতে পারে!
শোনা যাচ্ছে যে এর আগে ডক্টর লাহিড়ী তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী চন্দ্রশেখরকেও দেখা না করার জন্য এমন জবাব দিয়েছেন।
সত্যিই পৃথিবীতে ডক্টর লাহিড়ীর মতো মানুষ এখনও আছেন। উনি ১৯৯৪ সাল থেকে তার পুরো বেতন দরিদ্রদের জন্য দান করছেন। এখন অবসর গ্রহণের পর যে পেনশন পান, তার থেকে তিনি ততটা পরিমাণই নেন যাতে তিনি দুবেলার খাবার খেতে পারেন। বাকি পরিমাণ বিএইচইউ তহবিলে দিয়ে দেন যাতে সেখানকার দরিদ্ররা এটি থেকে উপকৃত হতে পারে।
তিনি এখনও বিএইচইউতে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাচ্ছেন। ডাঃ লাহিড়ীকে এখনও এক হাতে একটি ব্যাগ, অন্য হাতে একটি কালো ছাতা নিয়ে বাড়ি বা বিএইচইউ হাসপাতালের দিকে হাঁটতে দেখা যায়।
আজকাল বেশিরভাগ ডাক্তার দ্বারা রোগীকে লুটে নেওয়ার ঘটনা তো আমরা জানিই, কিন্তু ডাঃ লাহিড়ী দেশের এমন একজন ডাক্তার, যিনি বিনামূল্যে রোগীদের চিকিৎসা করেন। এই পরিষেবার জন্য, ডঃ লাহিড়ী ২০১৬ সালে ভারত সরকার কর্তৃক চতুর্থ সেরা নাগরিক পুরস্কার ‘পদ্মশ্রী’-তে ভূষিত হয়েছেন।
ডাঃ লাহিড়ী ১৯৭৪ সালে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসাবে তার কর্মজীবন শুরু করেছিলেন এবং আজও তিনি বেনারসে একজন দেবদূতের চেয়ে কম নন। বেনারসে মানুষ তাকে সত্যিকারের ঈশ্বরের মতোই চেনে। মদন মোহন মালব্য যে স্বপ্ন লালন করে বিএইচইউ প্রতিষ্ঠা করেছেন তা আজও পালন করছেন ডাঃ লাহিড়ী।
আজ, যখন বেশিরভাগ ডাক্তাররা বিলাসবহুল জীবনযাপন করে, দীর্ঘ এবং ব্যয়বহুল গাড়ি চালায়, ওষুধ কোম্পানি এবং প্যাথলজি সেন্টারের সাথে যোগসাজশ করে মামুলি কমিশনের জন্য, সেখানে ডাঃ লাহিড়ী, যিনি তিন দশক ধরে মেডিকেল কলেজে শতাধিক ডাক্তারকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন, তার নিজস্ব চার চাকার গাড়ি নেই।
ডাঃ লাহিড়ী তার পেশার প্রতি যতটা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ততটাই তার সময়ানুবর্তিতা। আজ তার বয়স প্রায় ৭৫ বছর, কিন্তু তাকে দেখে বিএইচইউ-এর মানুষ তাদের ঘড়ির কাঁটা মেলায়। তিনি প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে বিএইচইউতে আসা-যাওয়া করেন। অবসর গ্রহণের পর বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ইমেরিটাস অধ্যাপকের মর্যাদা দেয়।
তিনি ২০০৩ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সেখানে ইমেরিটাস অধ্যাপক ছিলেন। এর পরও কর্তব্যের প্রতি নিষ্ঠার পরিপ্রেক্ষিতে ইমেরিটাস অধ্যাপক হিসেবে তিনি চাকরি করছেন। যে যুগে অনেক চিকিৎসক মৃতদেহ ভেন্টিলেটরে রেখে বিল করতে পিছপা হয় না, সেই যুগে এই ঈশ্বরতুল্য ডাক্তার একটি দৃষ্টান্ত।
আমেরিকা থেকে ডাক্তারি পড়ার পর, ১৯৭৪ সালে, তিনি BHU-তে মাসে ২৫০ টাকায় লেকচারার নিযুক্ত হন।
দরিদ্র রোগীদের সেবা করার জন্য তিনি বিয়েও করেননি। ১৯৯৭ সাল থেকে তিনি বেতন নেওয়া বন্ধ করে দেন। তখন তার মোট বেতন ছিল এক লাখ টাকার ওপরে। অবসর নেওয়ার পর তিনি যে পিএফ পেয়েছেন, তাও তিনি বিএইচইউতে দিয়ে দিয়েছেন। তিনি প্রতিদিন সকাল ৬ টায় বিএইচইউতে পৌঁছান এবং তিন ঘন্টা কাজ করার পরে বাড়ি ফেরেন। একইভাবে, প্রতিদিন সন্ধ্যায় তার দায়িত্ব পালন করেন। বিনিময়ে তিনি বিএইচইউ থেকে আবাসন ছাড়া অন্য কোনো সুবিধা নেন না।
caller_get_posts
is deprecated. Use ignore_sticky_posts
instead. in /home/somoynewsbd/public_html/wp-includes/functions.php on line 5667caller_get_posts
is deprecated. Use ignore_sticky_posts
instead. in /home/somoynewsbd/public_html/wp-includes/functions.php on line 5667
Leave a Reply