ঐশ্বর্য সরোয়ার অপূর্ব , জবি প্রতিনিধি
যে বয়সে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে স্কুলে যাবার কথা সেই বয়সে দারিদ্র্যের গোলক ধাঁধাঁয় পথ হারিয়ে কায়িক পরিশ্রমের কাজে বাধ্য হচ্ছে শিশুরা। তাদের মধ্যে এমনি একজনের সাথে কথা হল (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক)। মাত্র ১৬ বছর বয়সে যখন তার হাতে থাকার কথা ক্লাসের বই, ঘুড়ে বেড়ানোর কথা বন্ধুদের সঙ্গে, মেতে ওঠার কথা খেলার মাঠে- সেই বয়সেই তাকে কাঁধে তুলে নিতে হয়েছে পরিবারের বোঝা। পরিবার, জীবন, সমাজ কী- সেটার বুঝে ওঠার আগেই মাথায় চেপে বসেছে আকাশ সমান দায়িত্ব। এসএসসি পরীক্ষা শেষ করে চাঁদপুর থেকে চলে এসেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। পড়ালেখা করতে নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটিরিয়াতে কাজ করছে। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে যেখানে শিক্ষার্থীরা আসে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে সেখানে ক্যাফেটিরিয়ার থালা-বাসন আনা-নেয়া করতে সময় পার হয় তার। চার ভাইবোনের মধ্যে দ্বিতীয় সে। তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি তার কৃষক বাবা। অন্যের জমিতে চাষাবাদ করে চলে তাদের পরিবার। দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতির এ সময়ে পরিবারের হাল ধরতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটিরিয়ায় কাজ করতে হচ্ছে। পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গেছে তার। দিন শেষে রাতে ঘুমাতে ঠাই হয় ক্যাফেটিরিয়ার ফ্লোরে। পারিবারিক আর্থিক দুর্দশা বিবেচনা করে সে বাবা-মায়ের কাছে ফিরতে চায় না সে। শুধু সেই নয়, তার মতো আরো চার-পাচজন অনুর্ধ্ব ১৮ বছরের শিশু-কিশোররা কাজ করছে এখানে। তাদের গল্পগুলোও অনেকটা একই রকম। বাংলাদেশের শিশু আইন ২০১৩ অনুসারে, অনুর্ধ্ব ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত সকল ব্যাক্তি শিশু হিসেবে বিবেচিত। আর তাদের দিয়ে কাজ করানো কিংবা কাজে বাধ্য করানো অপরাধের শামিল, রয়েছে শাস্তির বিধান।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়ের তথ্যমতে, দেশে অন্তত ১৭ লাখ শিশু রয়েছে- যারা বিভিন্ন কারণে শিশুশ্রমে নিয়োজিত। এদের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা ১ দশমিক ২ মিলিয়ন বা ১২ লাখ শিশু। তবে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার মতে দেশে শিশুশ্রমে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা আরও বেশি। ২০২৫ সালের মধ্যে সব ধরনের শিশুশ্রম বন্ধে সরকারের আইন থাকলেও তা বন্ধে এবং নিরুৎসাহিত করতে যথাযথ উদ্যোগ নেই। এতে ২০২৫ সালের মধ্যে শিশুশ্রম নিরসনে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মত প্রতিষ্ঠানে শিশুশ্রম নিরুৎসাহিত বা করে বরং অনুশীলন করায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী অলিভ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “শিশুশ্রম সমাজের ব্যাধি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটিরিয়ায় শিশুশ্রম করানো বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কলঙ্ক। ক্যান্টিন কর্তৃপক্ষের যথেষ্ট অসেচতনতা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিৎ দ্রুততম সময়ে এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া।”
এবিষয়ে জবি ক্যাফেটেরিয়া ম্যানেজার মাসুদ জানান, আমাদের ক্যাফেটিরিয়ায় অল্প সংখ্যক কর্মী রয়েছে যাদের বয়স ১৮ এর নিচে। তাদের পারিবারিক আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করেই তাদের এখানে কাজের জন্য নেয়া হয়েছে। আমার ভাতিজাও এখানে কাজ করে। আমার ভাইয়ের আর্থিক অবস্থা অতটা ভালো না তাই ভাতিজাকে নিয়ে এসেছি।
তাদেরকে ক্যাফেটিরিয়া বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনার জন্য দ্বায়িত্ব নেয়া হয়েছে কিনা প্রশ্নের জবাবে ম্যানেজার মাসুদ বলেন, না এখনো এধরনের কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তবে কেউ পড়াশোনা করতে চাইলে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় এর কাছে তাদেরকে নাইট স্কুলে পড়ানোর জন্য অনুরোধ করব।
এবিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক এবং শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম জানান, ক্যাফেটিরিয়ায় তো সার্টিফিকেট দেখে নিয়োগ দেয়া হয় না। ক্যাফেটেরিয়া ম্যানেজার দৈনিক হাজিরা ভিত্তিতে নিয়োগ দেয় ।
এ বিষয়ে ম্যানেজার ভালো বলতে পারবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাদেরকে পড়াশোনার দ্বায়িত্ব নেয়া হয়েছে কিনা প্রশ্নের জবাবে ড. আইনুল ইসলাম বলেন, একদল ফাও খাদকের জন্য তাদের বেতন দেয়াই কষ্টকর। তবে ক্যাফেটিরিয়ার ছেলেগুলো সত্যিই মানবেতর জীবন যাপন করে।
caller_get_posts
is deprecated. Use ignore_sticky_posts
instead. in /home/somoynewsbd/public_html/wp-includes/functions.php on line 5667caller_get_posts
is deprecated. Use ignore_sticky_posts
instead. in /home/somoynewsbd/public_html/wp-includes/functions.php on line 5667
Leave a Reply