1. admin@somoynewsbd.net : admin :
সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:৩৯ অপরাহ্ন

বোবায় ধরা বা স্লিপ প্যারালাইসিস কী?পরিত্রাণের উপায় কী?
       – মাহবুব করিম

  • সময়: সোমবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
  • ৬৫ View

হঠাৎ মধ্যরাতে আপনার ঘুম ভেঙে গেল। আপনার বুকের ওপর ভারী কিছু বসে আছে বলে অনুভব করলেন। এত ভারী কিছু যে ঠিকঠাক নিশ্বাসই নিতে পারছেন না। যখন টের পেলেন, আপনি চাইলেও শরীরের কোনো অংশ নাড়াতে পারছেন না, এমনকি চিৎকারও করতে পারছেন না। এটি সাধারণত একজন ব্যক্তির ঘুমিয়ে পড়া বা জেগে ওঠার আগমুহূর্তে ঘটে। সহজ কথায় নিজেকে এমন অসহায়ভাবে আবিষ্কার করাকেই স্লিপ প্যারালাইসিস বা বোবায় ধরা বলে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বোবায় ধরা বা স্লিপ প্যারালাইসিস স্রেফ ইন্দ্রিয়ঘটিত ব্যাপার। যখন শরীর গভীর ঘুমের একটি পর্যায় থেকে আরেকটি পর্যায়ে প্রবেশ করে, তখনই এটি ঘটে থাকে। বোবা ধরলে একেকজনের একেক রকম অনুভূতি হয়। কেউ ঘরের ভেতর ভৌতিক কিছুর উপস্থিতি টের পান, কেউ দুর্গন্ধ পান, কেউ বা আবার ভয়ানক কোনো প্রাণী দেখতে পান।

মোট কথা তখন হ্যালুসিনেশনের মতো একটা অবস্থার সৃষ্টি হয়। গভীর ঘুমের একটি পর্যায় থেকে আরেকটি পর্যায়ে যাওয়ার সময় মস্তিষ্ক সতর্ক হয়ে ঘুম ভেঙে গেলেও শরীর আসলে তখন ঘুমেই থাকে। ফলে অনুভূতিটা অন্যরকম থাকে। বিশেষ করে ইন্দ্রিয় তখন আচ্ছন্ন থাকায় মানুষ অদ্ভুত কিছু দেখে এবং শ্বাসকষ্ট অনুভব করে। সাধারণত যাদের ঘুমের সমস্যা থাকে, তারাই বেশি স্লিপিং প্যারালাইসিসে ভোগে। অনেকেই বিশ্বাস করে যে অতিলৌকিক কোনো কিছু এর জন্য দায়ী। আসলে এটি স্রেফ একটি শারীরবৃত্তীয় ব্যাপার। অন্য কিছু নয়।

‘বোবায় ধরা’র নামের উৎপত্তিঃ

বাংলায় ‘বোবায় ধরা’ নামকরণটি মূলত এসেছে লোকাচারীয় কুসংস্কার হতে। বলা হয়, বোবা নামের ভূত ঘুমের ভেতর মুখ চেপে ধরে, তাই চোখ খুলেও মানুষ তখন কথা বলতে পারে না। একেই ‘বোবায় ধরা’ বলে। তবে সেই ভূতটির নাম কেন ‘বোবা’, সেটিও বোঝা কঠিন নয়। বোবা বানিয়ে দেয়, তাই ‘বোবা’। যা হোক, ‘বোবা ধরা’ পরিভাষাটি বহুল প্রচলিত একটি বাগধারা মাত্র, কোনো বৈজ্ঞানিক পরিভাষা নয়। বোবা ধরার বাংলা পরিভাষাটি ‘নিদ্রি পক্ষাঘাত’, ইংরেজিতে ‘Sleep/Sleeping Paralysis’। বোবায় ধরলে ব্যক্তি যেহেতু তাৎক্ষণিকভাবে অতি-অল্প সময়ের জন্য বাক ও চলনশক্তি হারিয়ে ফেলেন, সেহেতু এটিকে ঘুমের পক্ষাঘাত বা প্যারালাইসিস বলা হয়।
কী হয় যখন বোবায় ধরে?

পেনিসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ব্রায়ান শার্পের মতে, বোবায় ধরা বা স্লিপ প্যারালাইসিসের ক্ষেত্রে তিন ধরনের দৃষ্টিভ্রম বা হ্যাল্যুসিনেশন তৈরি হতে পারে। প্রথমটি ইনট্রুডো বা ঘরের ভেতর কোনো অতিপ্রাকৃত কিছুর উপস্থিতি টের পাওয়া। দ্বিতীয়টি ইনকিউবিস। আপনার মনে হতে পারে যে, কোনো দৃশ্যমান বা ঈষৎ-অদৃশ্য সত্তা আপনার বুকের ওপর চেপে বসে আছে। বুকের ওপর চেপে বসার ধারণাকে আশ্রয় করে হেনরি ফুসেলের আঁকা ‘দ্য নাইটমেয়ার’ শিরোনামের পেইন্টিং। সর্বশেষ, লেভিটেশন। আপনার মনে হতে পারে, আপনাকে কেউ শোয়া অবস্থাতেই শূন্যে তুলে ফেলেছে এবং কোনো অচেনা গন্তব্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
এ তিন অবস্থার ভেতর একটি সাধারণ পরিস্থিতি আপনি অনুভব করবেন, আর তা হলো, না পারবেন বলতে, না পারবেন নড়তে। চিৎকার করতে চাইলেও মুখ ফুটে শব্দ বের হবে না। হাত-পা ছুঁড়তে পারবেন না। এ পক্ষাঘাত দশা স্থায়ী হবে সর্বোচ্চ কয়েক সেকেন্ড। এই পক্ষাঘাত অবস্থায় সৃষ্ট হ্যাল্যুসিনেশনের জন্যই ভূত-প্রেত জড়িয়ে তৈরি হয়েছে নানা গালগপ্পো।
প্রায় সব লোকগাঁথাতেই ভূত একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। রাতের বেলায় অশরীরীরা নানা বেশে এসে মানুষকে ভয় দেখায়, এমনটিই প্রচলিত। এই ভয়ের অনুভূতির সঙ্গে বোবায় ধরা বা স্লিপ প্যারালাইসিস জড়িয়ে গেছে আষ্টেপৃষ্ট। আর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা জানবার আগে সব অস্বাভাবিকতার পেছনেই অলৌকিকতা খোঁজা হতো। এ কারণেই বোবায় ধরাকে অনেকেই শয়তান বা ভূতের উপস্থিতি মনে করতেন।

বোবায় ধরার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাঃ

নিদ্রা বিশেষজ্ঞদের মতে, বোবায় ধরা তেমন গুরুতর কোনো অস্বাভাবিকতা নয়। তাই ওই অর্থে কোনো রোগ বা রোগের আলামত বলতেও তারা চান না। তাদের মতে, বোবায় ধরা হচ্ছে একটি অন্তর্বর্তীকালীন অবস্থা, যেখানে আমরা ঘুম ও জাগরণের একটি মাঝামাঝি দশায় অবস্থান করি।

ঘুমোনোর সময় আমাদের মস্তিষ্ক কথা বলা সহ চলনক্ষমতা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখে, যাতে আমরা ঘুমের মাঝে চলতে গিয়ে আঘাত না পাই। কিন্তু এমন স্থিতাবস্থার মাঝেই অনেক সময় আমরা জেগে উঠি। অর্থাৎ কখনো কখনো মস্তিষ্কের চেতন অংশের পুরোটা একত্রে কার্যকর হয় না। তখন অন্য অনুভবশক্তি সচল থাকলেও চলন ও বাকশক্তি ফিরতে একটু সময় নেয়। এর মাঝেই তৈরি হয় সাময়িক পক্ষাঘাত বা বোবায় ধরা।

ঘুম ও জাগরণের মধ্যবর্তী এ অবস্থার প্রকরণ হলো দুটি। একটি হতে পারে, যখন আপনি জাগ্রত অবস্থা থেকে ঘুমাচ্ছেন বা ঘুমাবো ঘুমাবো করছেন। অন্যটি হতে পারে যখন আপনি ঘুমন্ত অবস্থা থেকে জেগে উঠছেন বা উঠবেন। প্রথমটিকে বলা হয় প্রিডরমিটাল স্লিপ প্যারালাইসিস এবং দ্বিতীয়টিকে পোস্টডরমিটাল স্লিপ প্যারালাইসিস।

বোবায় ধরে কেন?

বোবায় ধরা বা স্লিপ প্যারালাইসিসের পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। এর অন্যতম কারণ হলো চাপের মধ্যে থাকা এবং যথেষ্ট বিশ্রামের অভাব। অনিয়মিত ঘুমও এর আরেকটি কারণ। ঘুম বিশেষজ্ঞরা এটিও বলেন যে যখন ঘুমের এক ধাপ থেকে আরেক ধাপে যাওয়ার সময় শরীর সাবলীলভাবে নড়াচড়া করতে পারে না, তখনই মানুষ বোবা ধরা বা স্লিপিং প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হয়। এ ছাড়া আরও কিছু ব্যাপার বোবা ধরার কারণ হতে পারে। যেমন ঘুমের নির্দিষ্টতা না থাকা, মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা, ঘুমের সঙ্গে জড়িত অন্যান্য সমস্যা, হাত-পায়ের মাংসপেশিতে খিঁচ ধরা, অনিদ্রা, বিষণ্নতা প্রভৃতি।

মায়ো ক্লিনিকের গবেষণা অনুযায়ী, ১০-২৫ বছর বয়সীদের ভেতর বেশি দেখা যায় সমস্যাটি। স্লিপ অ্যাপ্নি কিংবা নার্কোলেপ্সি ধরনের নিদ্রাজনিত রোগে আক্রান্তদের বেলায় বোবায় ধরার হার বেশি বলে নিউ ইয়র্কের মন্টেফিওর হেলথ সিস্টেমের স্লিপ- ওয়েক ডিজঅর্ডার সেন্টারের চিকিৎসক ডা. শেলবি হ্যারিস উল্লেখ করেছেন।

0Shares

Deprecated: File Theme without comments.php is deprecated since version 3.0.0 with no alternative available. Please include a comments.php template in your theme. in /home/somoynewsbd/public_html/wp-includes/functions.php on line 5583

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

Deprecated: Function WP_Query was called with an argument that is deprecated since version 3.1.0! caller_get_posts is deprecated. Use ignore_sticky_posts instead. in /home/somoynewsbd/public_html/wp-includes/functions.php on line 5667

Deprecated: Function WP_Query was called with an argument that is deprecated since version 3.1.0! caller_get_posts is deprecated. Use ignore_sticky_posts instead. in /home/somoynewsbd/public_html/wp-includes/functions.php on line 5667
© Somoynewsbd
Theme Customized By BreakingNews