মঞ্জুর:
“পথ নবজাতকরা আপনজন, হবে না কোনো বিভাজন’ এ শ্লোগানকে সামনে রেখে দেশের পরিত্যক্ত নবজাতকদের উদ্ধার এবং তাদের নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিতকরণে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করেছে ‘ডা: মুজিব নিউবর্ন ফাউন্ডেশন’। তবে অদূর অতীতে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হলেও এ প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার ডাঃ মো. মজিবুর রহমান বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই ব্যক্তি উদ্যোগে এ কার্যক্রমটি পরিচালনা করে আসছিলেন। ইতিমধ্যে তিনি ৪১ জন পরিত্যক্ত নবজাতককে উদ্ধার করে জরুরি চিকিৎসা সেবা দিয়ে সুস্থ করে তুলেছেন। তাদের অনেককে নিঃসন্তান দম্পতির হাতে তুলে দিয়ে জীবনের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছেন। পরবর্তীতে তার ব্যক্তিগত এ মানবিক কার্যক্রমকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দিতে সমাজের বিশিষ্টজনদের সঙ্গে নিয়ে এ ফাউন্ডেশনটি গড়ে তুলেছেন। সাত সদস্য বিশিষ্ট এ প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি নিজে দায়িত্ব পালন করছেন। সেক্রেটারি জেনারেলের গুরু দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন বাংলাদেশ নবজাতক হাসপাতালের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদা সুলতানা আসমা। ডাঃ মুজিব নিউবর্ন ফাউন্ডেশনের ট্রেজারার মনোনিত হয়েছেন একই হাসপাতালের পরিচালক শায়খা সুহাদা । প্রতিষ্ঠানটির চারজন এক্সিকিউটিভ মেম্বার হলেন- আশুলিয়া ওমেন এন্ড চিল্ড্রেন হাসপাতালের একাডেমিক পরিচালক ও পেডিয়াট্রিক বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডাঃ সুফিয়া খাতুন, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোঃ হুমায়ুন কবীর মঞ্জু, বাংলাদেশ ব্যাংকের ইন্টারনাল অডিট বিভাগের যুগ্ম পরিচালক (অবসরপ্রাপ্ত) আমেনা খাতুন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম পরিচালক (ব্যাংক ইনসেপশন ডিপার্টমেন্ট) আবুল কাশেম। ডাঃ মুজিব নিউবর্ন ফাউন্ডেশনের মূল লক্ষ্য হলো বাংলাদেশে পরিত্যক্ত নবজাতকদের উদ্ধার করা, যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা এবং তাদের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিত করা। পাশাপাশি পরিত্যক্ত নবজাতকদের দুরবস্থা সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানে সমাজকে উদ্বুদ্ধ করতে এ প্রতিষ্ঠানটি অঙ্গীকারাবদ্ধ। সরকারের কাছে ডাঃ মুজিব নিউবর্ন ফাউন্ডেশনের চাওয়া:- ১২ এপ্রিলকে জাতীয় পথ নবজাতক দিবস ঘোষণা করা। যাতে এ দিবসটিকে সামনে রেখে প্রতিবছর অসহায় পথ নবজাতকদের জন্য বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ করা যায়। একই সঙ্গে সরকারি উদ্যোগে ‘নিউবর্ন হাব’ গড়ে তোলার দাবি জানায় এ প্রতিষ্ঠানটি। যাতে যে কোনো বাবা-মা তাদের জন্ম দেওয়া অনাকাঙ্খিত সন্তানকে নিজের নাম-পরিচয় গোপন রেখে সেখানে রেখে যেতে পারেন। একই সঙ্গে মাতুয়াইলের শিশু-মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট-এ একটি বিশেষায়িত পথনবজাতক ইউনিট চালু করে সেখানে পথ নবজাতক পরিচর্যার সুযোগ তৈরির দাবি জানায় ডাঃ মুজিব নিউবর্ন ফাউন্ডেশন। যেখানে উন্নত এনআইসিইউ সুবিধা, পর্যাপ্ত সংখ্যক প্রশিক্ষিত ডাক্তার ও নার্স এবং সংক্রমণ প্রতিরোধ ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া পথ নবজাতকদের জন্য হিউম্যান মিল্ক স্টোরেজ চালু করা জরুরি বলে মনে করে ডাঃ মুজিব নিউবর্ন ফাউন্ডেশন। কেননা নবজাতকের জন্য মায়ের বুকের দুধ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ফেলে যাওয়া নবজাতকদের এ সুবিধা থাকে না। তাই, হিউম্যান মিল্ক স্টোরেজ সেন্টার চালু করে সেখানে নিরাপদভাবে সংরক্ষিত বুকের দুধ সরবরাহ করা জরুরি বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এসব দাবি নিয়ে ডাঃ মুজিব নিউবর্ন ফাউন্ডেশন ১২ এপ্রিল শনিবার বিশ্ব পথশিশু দিবস উপলক্ষ্যে রাজধানী ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সম্মুখ সড়কে ফাউন্ডেশনের মহাসচিব ও বাংলাদেশ নবজাতক হাসপাতালের চেয়ারম্যান মাহমুদা সুলতানা আসমা-র সঞ্চালনায় ও ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ডাঃ মোঃ মজিবুর রহমান এর সভাপতিত্বে একটি পথসভা ও সচেতনতা র্যালির আয়োজন করে। এ পথসভা ও র্যালি উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট অভিনেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং নিরাপদ সড়ক চাই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিচারপতি সৈয়দ মোঃ জিয়াউল করিম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোঃ হুমায়ূন কবির মঞ্জু, আশুলিয়া নারী ও শিশু হাসপাতালের একাডেমিক পরিচালক প্রফেসর ডাঃ সুফিয়া খাতুন, স্কিল ল্যাব সাব-কমিটির (বিসিপিএস) প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ডাঃ আহমেদ মর্তুজা, ইঞ্জিনিয়ার উমাশাহ উমায়ূন মনি চৌধুরী, বিশিষ্ট সাংবাদিক এ কে এম শাখাওয়াত হোসেন। এতে দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও মানবাধিকার কর্মীসহ সর্বস্তরের জনগন স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করেন।