বাবা-মা বদলানোর কোনো অপশন যদি থাকতো তাইলে,অনেক সন্তান’ই তাদের বাবা-মা বদলাতে চাইতো। কথা’টা কঠিন কিন্তু নির্মম সত্য।
করোনা পরবর্তী সময়ে একভাই একটা জব ম্যানেজ করে দেয়ার খুব আকুতি জানিয়ে ইনবক্স করছিলেন।ভদ্রলোক ৫ ভাইবোনের মধ্যে তৃতীয়। ৭ বছর ইংল্যান্ডে ছিলেন। সেই সময়ের সমস্ত ইনকাম তার বাবা’র একাউন্টে পাঠিয়েছেন। তারা বাবা-মা সেই টাকায় তাদের অন্য সন্তানদের ভবিষ্যৎ গড়ে দিয়েছেন ঠিকই কিন্তু যেই ছেলের টাকা,তার কোনো ব্যবস্থা করেন নাই।
দেশে আসার পর বুঝতে পারলেন তাকে নিঃস্ব করে দিয়েছে তার’ই বাবা-মা। তার টাকায় স্ট্যাবলিশড হয়ে অন্য ভাইবোন’রাই এখন তাকে করুনার চোখে দেখে।বউ-বাচ্চা নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কেটেছে করোনার পুরোটা সময়। বাবা-মা কিংবা ভাই-বোন কেউ ফিরেও তাকায়নি একবারের জন্য। অথচ;আমরাতো জানি বাবা-মায়ের চোখে সব সন্তান’ই সমান।
আমার কাছে মনে হয় এই কথা’টা পৃথিবীর সুন্দর মিথ্যাগুলির মধ্যে অন্যতম একটা মিথ্যাকথা। এই দেশে বাবা-মা’য়ের কাছে সব সন্তান কখনোই সমান নয়।
কিছুদিন আগে সিঙ্গাপুর প্রবাসীদের নিয়ে পরিচালিত একটা গ্রুপে এক বোন তার ভাইয়ের খোঁজ জানতে চেয়ে পোস্ট দিয়েছিলেন।
বোন লিখেছেন,তার ভাই ১১ বছর আগে সিঙ্গাপুর যায় এবং গত ৬ বছর ধরে তার সাথে পরিবারের কেউ যোগাযোগ করতে পারছেনা। তার ভাই তাদের গ্রামের এক মেয়েকে পছন্দ করতো। মেয়েটার অন্যত্র বিয়ে ঠিক হয়ে গেলে, তার ভাই নিজের বাবা-মা’কে জানায় তার ভালোবাসার কথা এবং মেয়েকে বিয়ে করার কথা।
বাবা-মা সব শোনার পরে ছেলেকে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ঢাকায় পাঠায় বিয়ের কেনাকাটা করার জন্য আর ওদিকে মেয়ের বাড়ী গিয়ে মেয়ের বাবা-মা’কে বলে আসে যেনো দ্রুত তাদের মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দেয়া হয় ছেলে ঢাকা থেকে ফেরার আগেই।
ছেলেটা বিয়ের শপিং করে এসে জানতে পারে তার পছন্দের মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেছে অন্যত্র। তার নিজের বাবা-মা’ই মেয়েকে অন্যত্র বিয়ে দেয়ার কথা বলে এসেছেন। এই বিষয়’টা ছেলে’টা মানতে না পারলেও মুখে কিছুই বলেনি।
সে বাসায় জানায় দেশে থাকলে মেয়েকে ভোলা কঠিন,তাকে যেনো বিদেশ পাঠিয়ে দেয়া হয়। ছেলের বাবা-মা খুশিতে বাকবাকুম হয়ে ছেলেকে সিঙ্গাপুর পাঠায়। বিদেশ যাওয়া বাবদ যেই টাকাটা খরচ হয়েছিলো,সেটা পাঠানোর পর ছেলে’টা সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় তার পরিবারের সাথে।
এখন ছেলের বাবা-মা ছেলের জন্য কাঁদে। তার বোন আকুতি জানিয়েছে যেনো তার ভাইকে খুঁজে দেয়া হয়।
এখানে দোষ’টা কার? কতটা অভিমান জমলে একটা মানুষ এরকম বদলে যেতে পারে,সেই ক্ষমতা কি এদেশের ম্যাক্সিমাম বাবা-মা’য়ের আছে?
আমাদের দেশে ছেলে’কে বিয়ে করানোর পর ভাবা হয় ছেলে পর হয়ে গেছে। সে এখন আর বাবা-মা’য়ের নাই।সে এখন বউ কিংবা শ্বশুর বাড়ির। আর,মেয়ে বিয়ে দেয়ার পর ভাবে মেয়েই সবচাইতে আপন,সবচাইতে কাছের।
আমি বলছিনা সব বাবা-মা’ই এরকম। কিন্তু,ট্রাস্ট মি আমি আমার চারপাশে এমন অনেক বাবা-মায়েদের দেখেছি যাদের জন্য নিজের ছেলের জীবন জাহান্নাম হয়ে গেছে, মেয়ের সাজানো গোছানো সংসার ধ্বংস হয়ে গেছে। নিজেদের আলগা ফুটানী মারতে গিয়ে ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে গেছে।
মসজিদে-ওয়াজ মাহফিলে শুধু মা’য়ের অধিকার আর দাবি নিয়ে বয়ান করা হয়, ইসলামে কি সন্তানের প্রতি পিতামাতার কর্তব্যের কথা বলা হয় নাই? সেই বিষয় নিয়ে কয়জন আলাপ করেন? কয়জন মুফতি মাওলানা তাদের ওয়াজে আনেন এই কথা?
আমি এমন একজন মানুষ’কে চিনি যার বাবা-মা সেই মানুষটির সাথে এক্সট্রিম লেভেলের খারাপ আচরন করার পরেও ভদ্রলোক যথেষ্ট যত্নশীল তাদের প্রতি। তার যত্ন যত বাড়ে,তাদের খারাপ আচরণের মাত্রা’ও তত বাড়ে।
সব সন্তান খারাপ হয়না আর বৃদ্ধাশ্রমে যারা থাকে তাদের সবার সন্তান’ই অমানুষ হয়না।
কর্মফল বলেও একটা কথা আছে,এটা আমরা অনেকেই ভুলে যাই।
আপনার সন্তান’ও একজন মানুষ।
তার’ও ভালো লাগা খারাপ লাগা আছে। তাকেও একটু বুঝার চেষ্টা করুন। স্বৈরাচারী মনোভাব পোষন করা বন্ধ করুন প্লিজ।
নোটঃ সব বাবা-মা কখনোই একরকম হয়না। বাবা-মা আল্লাহ’র শ্রেষ্ঠ নেয়ামত। উপরে যাদের কথা বলা হয়েছে তারা আসলেই স্বার্থপর।
caller_get_posts
is deprecated. Use ignore_sticky_posts
instead. in /home/somoynewsbd/public_html/wp-includes/functions.php on line 5667caller_get_posts
is deprecated. Use ignore_sticky_posts
instead. in /home/somoynewsbd/public_html/wp-includes/functions.php on line 5667
Leave a Reply