রাজশাহী থেকে সংবাদ সংগ্রহে মারিয়াঃগতকাল রাজশাহী প্রেসক্লাব সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট চত্বরে যৌন হয়রানি ও ধর্ষণের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
শত শত মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে সকাল ১১ টায় মানববন্ধন শুরু হয়ে দুপুরে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিচার দাবি করেন ঐ ভুক্তভোগী তরুণী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইদুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আসলাম উদ দৌলা, বিটিসি নিউজ সম্পাদক মুস্তাফিজুর রহমান রেজা ও প্রচার সম্পাদক আমানুল্লাহ আমান, এ সময় রাজশাহী প্রেসক্লাবের সকল ইলেকট্রনিক মিডিয়া প্রিন্ট মিডিয়া অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন। ভুক্তভোগী ওই তরুণী জানান,
নিজের যৌন আকাঙ্ক্ষা মেটাতে চাকরির প্রলোভনে
তরুণীদের নিজের জালে ফাঁসাতেন প্রকৌশলী জামানুর। কেউ রাজি না হলে দিতেন নানা অপবাদ। সম্প্রতি বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া শেষ বর্ষের মেধাবী এক তরুণীকে চাকুরীর প্রলোভনে ধর্ষণ করার পর তরুণীর মুখ খোলার চেষ্টা করলে পাগল অপবাদে ভর্তি করিয়েছেন মানসিক হাসপাতালে। এমন অভিযোগ উঠেছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের এই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে। পাবনা মানসিক হাসপাতাল থেকে মুক্তি মিললেও ওই তরুণীর দিন কাটছে অজানা আতঙ্কে।
মেধাবী তরুণী সেতুর জীবন সংগ্রামের গল্পটা যেন সিনেমার গল্পকেও হার মানাবে।
প্রকৌশলী জামানুরের অনৈতিক প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায় শিকার হয়েছেন ধর্ষণ, নির্যাতনের।
প্রকৌশলী জামানুর রহমান তরুনীর বাবার বস ছিলেন, সেই সুবাদে জামানুরের বাসায় আসা যাওয়া করতেন এবং তরুণী দিকে কুদৃষ্টিতে তাকাতেন। ২০১৫ সালে মহিলা পলিটেকনিকেল হতে ডিপ্লোমা পাস করার পর ডুয়েটে ভর্তি করার কথা বলে গাজীপুরে নিয়ে আসে, একদিন হঠাৎ ফোন দিয়ে মোহাম্মদপুর রাজধানী হোটেলে কার্ড নিয়ে ভর্তির কথা বলে রুমে নিয়ে জোরপূর্বক নির্যাতন, চাকুরীর কথা বলে তার বাবা মাকে ম্যানেজ করে ২০১৫ সাল হতে ২০২২ সাল পর্যন্ত ধর্ষণ ও মানসিক নির্যাতন করে। মেধাবী তরুণী মিথ্যা প্রলোভন বুঝতে পেরে মুখ খোলার কথা বললে তাকে ইনজেকশন দিয়ে মোবাইল, আইডি কার্ড, সার্টিফিকেট, পরীক্ষার এডমিট ও ডকুমেন্ট ছিনিয়ে নেয় জামানুর রহমান তার লোকদের দিয়ে। তরুণী চরম উত্তেজিত হওয়ায় তাকে শিকল দিয়ে অন্য জায়গায় বন্দি করে রাখে কয়েক মাস। তারপর মানসিক হাসপাতাল, পাবনায় পাগল বানিয়ে ভর্তি করান। ৩০ মে ২০২২ তারিখে স্বামী অজ্ঞাত ফোনে স্ত্রীর খবর জানতে পেরে আদালতের দারস্ত হয়ে পিবিআই এর সহযোগিতায় উদ্ধার হয়ে ২২ দফায় জবানবন্দি দেন। তারপর থেকে তরুণীর জীবনে নেমে আসে প্রাণ নাশের হুমকি, বাসায় হামলা। এভাবেই মেধাবী তরুণী বিএসসি শেষ বর্ষের পরীক্ষা দেওয়া আর হলো না। অবশেষে কোথাও বিচার না পেয়ে মেধাবী তরুণী বিচার চাইলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কাছে।শুধু তাই নয় পাবনা সুজানগর পৌরসভায় সুপেয় পানি সরবরাহ প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদনে প্রমাণিত হওয়ায় স্থানীয় সরকার বিভাগ, পানি সরবরাহ-১ শাখার স্মারক নং ৬৪৪ তারিখ-১৭-১০-২০২২ মাধ্যমে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়।
শুধু তাই নয় জামানুর রহমানের পিতা প্রায়ত মতি মিয়া ছিলেন পাকিস্তানি দের পীচ কমিটির চেয়ারম্যান কুষ্টিয়া জেলার। তার নাম অনুসারে পাকিস্তানি আমলে কুষ্টিয়ায় মতি মিয়া রেল গেটের নামকরণ করা হয়।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বরাবরে গত ৮ সেপ্টেম্বর দাখিলকৃত তিন পৃষ্ঠার অভিযোগে ২০ নম্বর দফায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, খুলনা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জামানুর রহমানের নারীলিপ্সুতা উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, নিয়োগ কমিটির সভাপতি ও সদস্য সচিবের সহযোগিতায় সংস্থার সাবেক প্রধান প্রকৌশলী সাইফুর রহমানকে চাকরিতে নিয়োগের প্রার্থী জোগান দিতেন প্রকৌশলী জামানুর রহমান। তারই ধারাবাহিকতায় এক তরুণীকে চাকরি দেয়ার কথা বলে দীর্ঘদিন সম্মানহানির পর তাকে চাকরি দিতে না পারায় ভুক্তভোগী তরুণী মুখ খুলতে পারে— এমন ভয় থেকে তরুণীকে প্রথমে শিকল বন্দি করে আটকে রাখে এবং পরে পাগল অপবাদে পাবনা মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন প্রকৌশলী জামানুর রহমান।
ভুক্তভোগী ওই তরুণীর স্বামী জানান, ফেনী থেকে একটা ফোন কল আসে এবং অপর প্রান্ত থেকে আমার স্ত্রীর নাম করে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি বলে তিনি পাবনা মেন্টাল হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এরপরই আমি বিষয়টি নিয়ে আদালতের শরণাপন্ন হই এবং আদালতের নির্দেশে আমার স্ত্রীকে মানসিক হাসপাতাল থেকে মুক্ত করি।
তিনি বলেন, তাদের অনেক টাকা এবং লোকজন আছে। তাই আমরা জীবন ও সম্মান রক্ষার্থে আত্মগোপনে আছি। ক্ষতি যা হওয়ার তা তো হয়েছে, এখন বেঁচে থাকতে চাই।
আদালতে তরুণী দেয়া জবানবন্দিতে দেখা যায়, দীর্ঘদিন কীভাবে জনস্বাস্থ্য বিভাগের প্রকৌশলী জামানুর রহমান সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চাকরি বাণিজ্য চালিয়ে আসছেন।
ভুক্তভোগী তরুণী বলেন, জামানুর রহমানের কাছে চাকরির জন্য গেলে তিনি বিভিন্ন ধরনের স্বপ্ন দেখান। এমনকি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলীও তার খুবই ঘনিষ্ঠ বলে জানান তিনি। তাকে যা বলবে তাই প্রধান প্রকৌশলী করবেন বলে জানান জামানুর রহমান। তার কাছে একটা চাকরি দেয়া তো মামুলি ব্যাপার। যেন আমার চাকরি হয়েই গেছে। এরপর এক পর্যায়ে প্রকৌশলী জামানুর আমাকে বলেন, ‘এমনি এমনি এ জগতে কেউ কাউকে কিছুই দেয় না— চাকরি তো দূরের কথা। কিছু পাইতে হলে কিছু দিতে হয়।’
জামানুর রহমানের এমন মন্তব্যের পর সেতু প্রকৃত বিষয়টি বুঝতে পেরে পিছু হটতে শুরু করলেই তার জীবনে নেমে আসে অমানিসার অন্ধকার। বানানো হয় পাগল। ভর্তি করানো হয় মানসিক হাসপাতালে।
চাকরির প্রলোভনে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জামানুর রহমানের তরুণীদের নিজের জালে ফাঁসানোর ঘটনাটি শিহরিত হয়ে ওঠার মতো। এমনকি প্রকৌশলী জামানুর রহমান তার অনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রমাণ নষ্ট করতে ভুক্তভোগী তরুণীর পরিবারের সহযোগিতা নিয়ে কীভাবে তাকে মানসিক রোগী সাজিয়েছেন তা পিবিআই তদন্তে উঠে এসেছে।
এ বিষয়ে প্রকৌশলী জামানুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘জরুরি মিটিংয়ে আছি—পরে কথা হবে।’ যদিও তিনি আর ফোন করেননি বা ধরেননি। মোবাইলে খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি।
প্রকৌশলী জামানুর রহমান ২০১৫-২০২২ সাল পর্যন্ত শারীরিক নির্যাতন করা এবং অনৈতিক কাজের মুখ খোলায় সুন্দর স্বপ্ন ভেঙ্গে দিয়ে প্রাণনাশের হুমকি এবং অজানা আতঙ্কে জীবন যাপন করছি। মমতাময়ী মায়ের কাছে প্রশ্ন করেন- কি অপরাধ ছিল আমার? কত পরিকল্পনা ছিল? কত স্বপ্ন ছিল! বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে চাকরি করে ছোট ভাইবোনদের মানুষের মত মানুষ করব। আমার সব স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছে এই কুলাঙ্গার জামানুর রহমান। আপনার কাছে সবিনয় অনুরোধ এই কুলাঙ্গারের এমন শাস্তি হোক যেন আর কোন মেয়ের সুন্দর স্বপ্ন আর কেউ নষ্ট করতে না পারে আবেদন জানিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার বরাবর আবেদন করেন।
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে সবার আগে সরকারি কর্মকর্তাদের স্মার্ট হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে উত্তরবঙ্গের অরাজনৈতিক স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন জননেতা আতাউর রহমান স্মৃতি পরিষদ।
শনিবার (৪ মার্চ) দুপুর ১২টায় রাজশাহী নগরীর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে এক সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে আয়োজিত মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করে এ পরামর্শ দেয় সংগঠনটি।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর খুলনা সার্কেলের প্রকৌশলী জামানুর রহমানের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী পরিবার এ মানববন্ধনের আয়োজন করে। তাদের বাসা পাবনার তেলিগ্রাম এলাকায়।
মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন রাজশাহী প্রেসক্লাব ও জননেতা আতাউর রহমান স্মৃতি পরিষদ সভাপতি সাইদুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. আসলাম-উদ-দৌলা, রাজশাহী প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক জামাল উদ্দিন, জননেতা আতাউর রহমান স্মৃতি পরিষদের সহঃ সভাপতি সালাউদ্দিন মিন্টু, বিটিসি নিউজ সম্পাদক খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান রেজা প্রমুখ।
এ সময় বক্তারা বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে সরকারি কর্মকর্তাদের স্মার্ট হওয়ার বিকল্প নেই। অথচ বিভিন্ন অফিসের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ওঠে। উন্নয়নমুখী বাংলাদেশে এটি দুঃখজনক। এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে প্রকৌশলী জামানুর রহমানের বিরুদ্ধে। এ অভিযোগের সঠিক তদন্ত হওয়া উচিৎ।
মানববন্ধনে ভুক্তভোগী নারী কান্নাজড়িত কণ্ঠে অভিযোগ করেন, তার বাবা ওই প্রকৌশলীর অফিসে চাকরি করার সুবাদে জামানুরের সঙ্গে পরিচয় হয়। এ সুযোগে বিভিন্ন রকম প্রলোভন দেখিয়ে তাকে ধর্ষণ ও নির্যাতন করেছেন ওই প্রকৌশলী। তাদের বাসায় সন্ত্রাসী পাঠিয়ে প্রাণনাশের হুমকি-ধামকিসহ নানা ধরণের অত্যাচার করা হয়েছে। এদিনের মানববন্ধনে জননেতা আতাউর রহমান স্মৃতি পরিষদের প্রচার সম্পাদক সাংবাদিক আমানুল্লাহ আমান, বোয়ালিয়া থানা কমিটির আহবায়ক সাগর নোমানী, ২৫ নম্বর ওয়ার্ড আহবায়ক মো. ইউসুফ, সদস্য রফিকুল হাসান চন্দন, আল-আমিন হোসেন, রাতুল সরকার, আরিফুল ইসলাম, মো. রাজন ও মিজানুর রহমান মিজানসহ আরও অনেকে অংশ নেন।
মানববন্ধন শেষে রাজশাহী প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে করেও অভিযুক্ত প্রকৌশলীর বিচার দাবি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করে ভুক্তভোগী পরিবার।
caller_get_posts
is deprecated. Use ignore_sticky_posts
instead. in /home/somoynewsbd/public_html/wp-includes/functions.php on line 5667caller_get_posts
is deprecated. Use ignore_sticky_posts
instead. in /home/somoynewsbd/public_html/wp-includes/functions.php on line 5667
Leave a Reply