নিজস্ব প্রতিবেদকঃ মারাকেশ ট্রিটি অনুসমর্থন বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির পক্ষ্যে ভিপদের সম্মানিত সদস্যদের জন্য কর্মশালা আয়োজন করস হয়েছে।উক্ত কর্মশালায় জনাব ভাস্কার ভট্টাচার্য, ন্যাশনাল
কনসালটেন্ট এক্রেসেবিপিটি, এসপায়ার টু ইনোভেট প্রোগ্রাম (এটুআই), আইসিটি ডিভিশন, গণজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এবং জনাব জাফর রাজা চৌধুরী, সাবেক রেজিস্টার, কপিরাইটস,বাংলাদেশ কপিরাইট ডিভিশন উপস্থিত থেকে কর্মশালা পরিচালনা করেছেন।
১৮ই মার্চ (শনিবার) মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এসজেএফ) ও ভিজুয়ালী ইমপাওয়ার্ড পিপলস সোসাইটি (ভিপস)-এর যৌথ আয়োজনে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর এর সেমিনার কক্ষ-২ অনুষ্ঠিতব্য এ কর্মশালায়
সভাপতিত্ব করবেন জনাৰ নাসরিন জাহান, সভাপতি ভিপস। এছাড়াও ভিসের কার্যনির্বাহী পরিষদের সম্মানিত সদস্যবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন জনাব মো. জাহাঙ্গীর আলম, সাধারণ সম্পাদক, ভিপস।
প্রতিবছর সারা পৃথিবীতে লক্ষ-লক্ষ বই প্রকাশিত হয়, যার মধ্যে শুধু ১৭ শতাংশ বই ২৮৫ মিলিয়ন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, ও প্রতিবন্ধী মানুষের ব্যবহার উপযোগী থাকে, এই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় নব্বই শতাংশ মানুষ এবং উন্নয়নশীল দেশে বাস করেন। World Intellectual Property Organization (WIPO) এর সদস্য দেশ সমূহ ২৭ জুন, ২০১৩ এ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সহ সকল প্রকার পঠন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিশ্বব্যাপী বই পড়ার সংকট দূর করতে মারাকেশ ট্রিটি স্বাক্ষর করে। চুক্তিটি ২০১৬ সালের ৩০
থেকে বাস্তবায়ন হচ্ছে। বাংলাদেশের আগে এই চুক্তিতে প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা
অনুস্বাক্ষর করেছে। মারাকেশ ট্রিটি জাতিসংঘ-এর WIPO কর্তৃক প্রণীত আন্তর্জাতিক চুক্তি। এই চুক্তির মাধ্যমে সৃষ্টি ও পঠন প্রতিবন্ধীদের জন্য অ্যাকসেসিবল বই (যেমন: ডেইজি) মাল্টিমিডিয়া টকিং বই, ব্রেইল ইত্যাদি) প্রণয়ন এবং বাঁধা মুক্তভাবে এক দেশের অ্যাকসেসিবল কনটেন্ট অন্য দেশের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী জনগণের জন্য ব্যবহারের অনুমতি প্রদান করা হয়। প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর জন্য আরও সুযোগ বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মারাকেশ ভিআইপি ট্রিটি অনুসমর্থন করছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক
আয়োজিত ১৩ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে সিরডাপ মিলনাতয়নে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ ঘোষিত প্রতিবন্ধী অধিকার সনদ বাস্তবায়নে গঠিত জাতীয় পরিবীক্ষণ কমিটির ১৫তম সভায় মারাকেশ ট্রিটি অনুসমর্থন করার বিষয়ে সবাই একমত পোষণ করেন। এছাড়াও বর্তমান সরকারের প্রথম মন্ত্রিসভা বৈঠকে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষ আইন ২০১০ এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা বিধিমালা- ২০১৫ এর আলোকে ক্যাবিনেট কৰ্তৃক অনুমোদিত প্রতিবন্ধী ব্যাক্তি বিষয়ক জাতীয় কর্মপরিকল্পনায় মারাকেশ ভি আই পি চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়টি
অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এ মানবাধিকার এর যে নীতি গুলোর রূপরেখা নির্ধারণ করা হয়েছে তার মধ্যে মারাকেশ ট্রিটি প্রথম কপিরাইট ট্রিটি যা পরিষ্কার ভাবে মানবাধিকার দৃষ্টিকোণ থেকে নির্ধারণ করা হয়েছে। মারাকেশ ট্রিটি এমন এক ধরনের কপিরাইট পদ্ধতি বর্ণনা করে যা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ও পঠন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ছাপানো অক্ষরের প্রকাশিত বই এক্সসেসিবল পদ্ধতিতে তৈরি করার বাঁধা সমূহ দূর করবে। তবে এখানে উল্লেখ্য যে, মারাকেশ ট্রিটি শর্ত অনুযায়ী বাংলাদেশে কপি রাইট আইনে পরিবর্তন আনা আবশ্যক। যাতে করে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বাজার উপযোগী বই
তৈরীর ক্ষেত্রে কপি রাইট কোন বাঁধা না হয় বা কপি রাইটের শর্তাবলী শিথিল করা।এরই ধারাবাহিকতায় দেশের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সহ সকল প্রকার পঠনপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বই পড়ার সংকট দূর
করতে আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ব সংস্থার মারাকেশ ট্রিটি চুক্তিতে অনুস্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ব সংস্থার (ডব্লিউআইপিও) সদর দপ্তর। গত ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ সোমবার জেনেভায় জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান সংস্থাটির মহাপরিচালক ড্যারেন টাং এর হাতে মারাকেশ চুক্তিতে বাংলাদেশের অনুস্বাক্ষরের দলিল হস্তান্তর করেন। দেশের প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর পড়ার সুযোগকে অবারিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের ১১৬তম দেশ হিসেবে এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে।
উল্লেখ্য, মরক্কোর মারাকেশ শহরে ২০১৩ সালের জুন মাসে জাতিসংঘেরদের বিশেষায়িত সংস্থা ডব্লিউআইপিএর একটি কূটনৈতিক সম্মেলনে মারাকেশ চুক্তি চূড়ান্ত করা হয়।আন্তর্জাতিক মেধাসত্ব সংস্থার মহাপরিচালক ড্যারেন টাং বলেন, মারাকেশ চুক্তিতে অনুস্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যাক্তি সহ সকলের জন্য অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অংশগ্রহনের
সমান অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এছাড়া ভবিষ্যতে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তি সকল প্রকার পঠনপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জীবনমান উন্নয়নে বাংলাদেশের সাথে সংস্থাটি একসাথে কাজ করার সুযোগ তৈরি হবে।
এছাড়াও, মারাকেশ চুক্তিতে অনুস্বাক্ষরের ফলে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নিবন্ধিত (সমাজসেবা অঅধিদপ্তর এর প্রতিবন্ধী বিষয়ক ডেটাবেইজ) ৪ লক্ষ ৮ হাজার একান্ন জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ডব্লিউআইপিও এর অ্যাক্সেসিবল
বুক কনসোর্টিয়াম এর ৪ লক্ষাধিক বই পড়ার সুযোগ তৈরি হবে। ইতোমধ্যে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর জীবনমান
উন্নয়ন শিক্ষা কারিগরি ও বৃত্তিমূলক পশিক্ষণ ও
জীবনমুখী আত্মকর্মসংস্থান বিষয় ভিত্তিক দক্ষতা বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা সেবাসমূহ নিশ্চিতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এটুআই এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ও আই সি টি মন্ত্রণালয় এর যৌথ উদ্যোগে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা প্রদানে মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক ও এক্সেসিবল ডিকশনারি তৈরি বছরের শুরুতে ব্রেইল পদ্ধতির পাঠ্যপুস্তক
বিতরণ ও আইসিটি ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এছাড়া, এটুআই বাংলাদেশ সরকারের প্রধান মন্ত্রীর
কার্যলয়,সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস এবং বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্মিলিতভাবে কাজ করছে। মারাকেশ
চুক্তিতে অনুসমর্থন করে সকল ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শিক্ষার সমান সুযোগ প্রদান এবং জাতিসংঘ ঘোষিত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সনদ (ইউএনসিআরপিডি) ও ২০৩০ সালের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-৪ অর্জনে বাংলাদেশ একধাপ এগিয়ে গিয়েছে।
বাংলাদেশে মারাকেশ ট্রিটি অনুসমর্থনের পেছনে রয়েছে অসংখ্য মানুষ এবং সংগঠনের প্রায় এক দশকের যৌথ প্রচেষ্টা ও আন্দোলন। ভিজুয়ালী ইম্পেয়ার্ড পিপলস সোসাইটি (ভিপস) ২০১৩ সাল থেকে বাংলাদেশে মারাকেশ ট্রিটি অনুসমর্থনের জন্য
এডভোকেসি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।এবং
২০১৫ সাল থেকে ট্রিটি অনুসমর্থনের জন্য এডভোকেসি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে এবং
সক্রিয়ভাবে মারাকেশ ট্রিটি অনুসমর্থনের জন্য কপিরাইট অফিসের সাথে এডভোকেসি কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করে। পরবর্তীতে ২০১১ সাল হতে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সাথে যৌথভাবে এফসিডিও এর অর্থায়নে
“Strengthening Government Primary Education for Equal Rights
of Learners and Teachers with Disabilities – প্রকল্পের কার্যক্রমের অংশ হিসেবে
মারাকেশ ট্রিটি অনুসমর্থনের জন্য কপিরাইট অফিস, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, আইসিটি
ডিভিশন, এ টু আই সহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে সমমনা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠন সমূহকে সাথে নিয়ে মারাকেশ ট্রিটি অনুসমর্থনের সক্রিয়ভাবে এডভোকেসি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
যারই ফলশ্রুতিতে ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২ তারিখে বাংলাদেশ সরকার মারাকেশ ট্রিটি চুক্তি অনুসমর্থন করে ।মারাকেশ ট্রিটি অনুসমর্থন বাংলাদেশের কপিরাইট আইনে কার্যকর করা হলে এর মাধ্যমে সব থেকে বেশী উপকৃত হবে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষেরা। ভিজুয়ালী ইম্পেয়ার্ড পিপল্স সোসাইটি (ভিপস) এবং মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন যৌথভাবে সমমনা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠন সমূহকে সাথে নিয়ে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রবেশগম্যতা নিশ্চিতকল্পে মারাকেশ টিটি অনুসমর্থন পরবর্তী এর বাস্তবায়নে জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে নিয়মিত এডভোকেসি কার্যক্রম পরিচালনা করার প্রত্যাশা করছে।
caller_get_posts
is deprecated. Use ignore_sticky_posts
instead. in /home/somoynewsbd/public_html/wp-includes/functions.php on line 5667caller_get_posts
is deprecated. Use ignore_sticky_posts
instead. in /home/somoynewsbd/public_html/wp-includes/functions.php on line 5667
Leave a Reply