1. admin@somoynewsbd.net : admin :
রবিবার, ২৮ মে ২০২৩, ০২:৪৩ অপরাহ্ন

আমরা এখন কি করবো তা ভাবার সময় এসেছেঃ
মাহবুব করিম

  • সময়: সোমবার, ২৭ মার্চ, ২০২৩
  • ৭০ View

বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজকে বদলি করে ঢাকায় আনা হয়েছে। এই বদলি অনুমিতই ছিল।

কোনো পুলিশ সদস্য বিতর্কিত কিছু করলে যেভাবে তাকে ‘পুলিশ লাইনে সংযুক্ত’ করা হয়, ঐ জজকেও ওভাবে আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে।

বগুড়া বালিকা বিদ্যালয়ের নিয়ম হলো ছাত্রীরা পালাক্রমে শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দেবে, দারুণ নিয়ম। ঐ জজের মেয়ের পালা যখন এল, তখন নিজেকে সে অভিজাত (এলিট) ঘোষণা দিয়ে ঝাড়ু দিতে অস্বীকৃতি জানাল এবং সহপাঠীদেরকে বস্তির মেয়ে আখ্যা দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিল।

যারা সেই পোস্টের বিরোধিতা করে মন্তব্য করেছিল, মাত্রাতিরিক্ত ঔদ্ধত্যের পরিচয় দিয়ে ‘অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ’ তাদেরকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পাকড়াও করার হুমকি দিয়েছেন এবং বিরোধিতাকারীদের মায়েদেরকে বাধ্য করেছেন তার (জজ) পা ধরে ‘মাফ’ চাইতে।

বদলি এই অপরাধের উপযুক্ত শাস্তি না— এ কথা সবাই জানে। সপ্তাহখানেক পরে এই ঘটনা কেউ মনে রাখবে না— তাও সবার জানা।

বাংলাদেশে আমলা, পুলিশ ও বিচারকদের একাংশের ঔপনিবেশিক ঔদ্ধত্যের কথাও সবার জানা। এর কোনো সমাপ্তি বা সমাধান নেই।

সবকিছু সবার জানা থাকা সত্ত্বেও একটা কথা বলতে ইচ্ছে করছে। আলোচ্য জজের আলোচ্য মেয়েটা মাত্রই অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। বয়স তেরো বা চৌদ্দ। জন্ম থেকেই সে চেনাপরিচিত সবার কাছ থেকে মাতৃসূত্রে আলাদা গুরুত্ব পেয়ে এসেছে।

মা ক্ষমতাধর বিধায় সবাই এই মেয়েটিকে তোয়াজ করেছে। বুড়ো-বুড়ো আইনজীবী আর মায়ের কার্যালয়ের বৃদ্ধ কর্মচারীরাও মেয়েটিকে শৈশব থেকেই ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করেছে, জন্মদিনে দামি উপহার দিয়ে ভাসিয়ে দিয়েছে, জজকে খুশি করার জন্য জজের মেয়েকে গুরুত্ব দিয়ে মাথায় তুলে রেখেছে।

মাও মেয়েকে পদে-পদে বুঝিয়ে দিয়েছেন সে অন্যদের চেয়ে আলাদা; অন্যরা তার প্রজা, সে প্রভু। সে কখনোই সবার সাথে স্বাভাবিকভাবে মেশেনি; মিশেছে কেবল অন্যান্য জজ, আমলা আর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সন্তানদের সঙ্গে।

ওর পৃথিবীটা অনেক ছোট। জজ কোর্ট, জাজেস কমপ্লেক্স, খাসকামরা, জাটি (জুডিশিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ট্রেনিং ইনস্টিটিউট), সার্কিট হাউজ, অফিসার্স ক্লাব, লেডিস ক্লাব আর বিভিন্ন সরকারি অতিথিশালার মধ্যে ওর চলাফেরা-জানাশোনা সীমাবদ্ধ।

মেয়েটার বয়স চিরকাল তোরো-চৌদ্দতে থেমে থাকবে না। ওর বয়স একদিন তেইশ-চব্বিশ হবে, তেত্রিশ-চৌত্রিশ হবে; স্কুল পেরিয়ে কলেজে পা দেবে, কলেজ পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে।

কলেজেও সে বহুবিধ বিতণ্ডায় জড়াবে, একে-ওকে চড়থাপ্পড় মারবে, দরিদ্র সহপাঠীদের চুলের মুঠি ধরে টানাহেঁচড়া করবে।

কলেজ পর্যন্ত সে মায়ের ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর মায়ের পরিচয় কোনো কাজেই আসবে না।

বিশ্ববিদ্যালয় জজের মেয়ে, ডিসির ছেলে, সচিবের ভাতিজা, মন্ত্রীর ভাগনে পোঁছে না। বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীই গোনে না। বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রপ্রধানকে সিংহাসন থেকে টেনেহিঁচড়ে নামায়, কাউকে-কাউকে সিংহাসনে বসায়৷

বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েও এই মেয়ে দম্ভ দেখানোর চেষ্টা করবে। ব্যর্থ হবে। ব্যর্থ হয়ে মায়ের শরণাপন্ন হবে। মা তখন অসহায় বোধ করবেন। বয়সের পরিক্রমায় মেয়ে বিবিধ ব্যক্তিগত জটিলতায় জড়াবে। মা আবারও অসহায় হবেন। ততদিনে মায়ের ক্ষমতাও আগের মতো আর থাকবে না, থিতিয়ে আসবে। মফস্বলে যত ক্ষমতা দেখানো যায়, রাজধানীতে এর ছিটেফোঁটাও না।

মা তখন মেয়ের হয়ে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে ক্ষমা চাইবেন, করজোড় করবেন, মাথা নত করবেন; নিজের মানসম্মান বাঁচাতে হয়তো আড়ালে কারো পা-ও ধরবেন। তখন পা ধরেও কাজ হবে না।

সবচেয়ে বড় কথা— এই মেয়ে একদিন মায়ের গায়েও হাত তুলতে দ্বিধা করবে না। সেই দিন আসবে। অনিবার্যভাবেই আসবে।

এই মা নিজের গর্ত নিজেই খুঁড়ে রেখেছেন। মেয়ের স্কুলে মা হিসেবে না গিয়ে ‘অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ’ হিশেবে গিয়ে, চেয়ারটাকে খাসকামরায় রেখে না গিয়ে সাথে করে স্কুলে নিয়ে গিয়ে, ব্যক্তিগত বিতণ্ডায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে তিনি মস্ত ভুল করেছেন।

এই ভুলের খেসারত তাকে সারাজীবন দিতে হবে। তিনি নিজেই যেহেতু আদালত, তাই আদালত তাকে শাস্তি দেবে না। তাকে শাস্তি দেবে ‘সময়’, তাকে শাস্তি দেবে তার নিজেরই মেয়ে।

তিনি জানেন না— নিজ ঘরে তিনি একটা বিস্ফোরক বড় করে চলছেন, ননির পুতুল গড়তে গিয়ে তিনি গড়ে তুলছেন একটা শনির পুতুল।

পুলিশকর্মকর্তার মেয়ে ঐশীর কথা ভুলে গেলে চলবে না। ঐশীরা একদিনে ঐশী হয় না। আঠারো বছর আশকারা পেয়ে তবেই ঐশীরা ঐশী হয়, রাতের আঁধারে বাবা-মাকে হত্যা করে।

বাচ্চাদের মধ্যকার ঝগড়াঝাটিতে জড়িয়ে যেসব অভিভাবক নিজেদের সন্তানকে শাসন না করে উলটো প্রাতিষ্ঠানিক বা অর্থনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে সন্তানের প্রতিপক্ষকে দমন করে উল্লাস করেছেন, ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়— তাদের পরিণতি কখনও ভালো হয়নি।

এই সন্তানরা এই অভিভাবকদেরকে পরবর্তীকালে মাটিতে মিশিয়ে দেয়। দম্ভ চিরদিন থাকে না, চেয়ার চিরদিন থাকে না। চেয়ার বড় ঝুঁকিপূর্ণ এক বস্তু। এর যেকোনো একটা পায়া ভেঙে গেলেই পপাত ধরণীতল।

যে শিক্ষা একজন ‘অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ’কে সন্তান শাসন শেখাতে পারে না, একজন জেলা প্রশাসককে ‘স্যার’ ডাক শোনার লকলকে লোভ থেকে নিবৃত্ত করতে পারে না; সময় এসেছে সেই শিক্ষার দিকে আঙুল তোলার।

এইসব কলতলার জেলাপ্রশাসক-বিচারক দিয়ে আমরা কী করব— তাও ভাবার সময় এসেছে।

0Shares

Deprecated: File Theme without comments.php is deprecated since version 3.0.0 with no alternative available. Please include a comments.php template in your theme. in /home/somoynewsbd/public_html/wp-includes/functions.php on line 5583

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

Deprecated: Function WP_Query was called with an argument that is deprecated since version 3.1.0! caller_get_posts is deprecated. Use ignore_sticky_posts instead. in /home/somoynewsbd/public_html/wp-includes/functions.php on line 5667

Deprecated: Function WP_Query was called with an argument that is deprecated since version 3.1.0! caller_get_posts is deprecated. Use ignore_sticky_posts instead. in /home/somoynewsbd/public_html/wp-includes/functions.php on line 5667
© Somoynewsbd
Theme Customized By BreakingNews