নিজস্ব প্রতিনিধি:
গাজীপুর জেলা, কালিগঞ্জ উপজেলার মেগনাথ কর্মকারের ছেলে গনেশ কর্মকারের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্য, দূর্নীতি ও সরকারি দপ্তরের মালামাল আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। বর্তমানে উপ-সহকারী পরিচালক হিসেবে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন, ডাল ও তৈলবীজ এর কার্যালয় ব্রাক্ষন্দী, নরসিংদীতে কর্মরত আছেন উক্ত গনেশ। তিনি সরকারি চাকুরীজীবি হয়েও বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকান্ড ও দূর্নীতির সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তার এই সকল অনৈতিক কর্মকান্ড ও দূর্নীতির সহযোগী হিসেবে রয়েছেন তার আপন বড় ভাই পরেশ কর্মকার, তার শ্বশুর ও মামা শ্বশুর শুভঙ্কর।
অভিযোগে জানা যায়, নিজ অফিসের সরকারি বীজ, বাদাম, সরিষা রাতের আধারে নরসিংদী বাজারে বিক্রি করে সরকারি লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ, অফিসের বিভিন্ন কম্পিউটার, প্রিন্টার, স্ক্যানার, জেনারেটর, কুলিং, ড্রেসিং মেশিনারীজ ইত্যাদি মেরামত বাবদ ভূয়া ভাউচার ও সীল ব্যবহার করে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ, বীজ, বাদাম, সরিষা ড্রেসিং, ট্রাকে লোড-আনলোড বাবদ লোকবল বা মজদুর অতিরিক্ত দেখিয়ে নিজেই ভূয়া এনআইডি কার্ড বানিয়ে অতিরিক্ত মজুরির টাকা আত্মসাৎ করেন উক্ত গনেশ। গনেশ কর্মকার ১০ বছরের চাকুরী জীবনে লক্ষ লক্ষ টাকা অবৈধ ভাবে উপার্জন করে তার নিজ গ্রাম বক্তারপুরে ব্যয়বহুল বাড়ি নির্মাণ করেছে। সেই বাড়িতে ফ্রিজ, ওয়াসিং মেশিন, এসি, সি.সি ক্যামেরা ইত্যাদি সব কিছুই রয়েছে। অতি অল্প সময়ের চাকুরীতে গনেশ কর্মকার নরসিংদী বাজারে পোস্ট অফিসে ৩০ লক্ষ টাকার এফডিআর করেছেন।
জানা যায়, তার স্ত্রীর চলাফেরা জাকজমকপূর্ণ এবং তার প্রায় ১৫/২০ ভর স্বর্ণালংকার আছে। মাঝে মাঝে তারা বিমানে কক্সবাজার ট্যূরে যান। ছুটিতে গনেশ কর্মকার ফরিদপুরে তার শ্বশুর বাড়িতে ভাড়ার প্রাইভেটকার নিয়ে যায় এবং সেখানে সব সময় তার সাথে গাড়ি থাকে। চাকুরী প্রার্থীদের নিকট সে নিজেকে অংকিতা ল্যাপটপ সেন্টারের স্বত্তাধিকারী হিসেবে পরিচয় দেয় যা অবৈধ একটি প্রতিষ্ঠান অংকিতা ল্যাপটপ সেন্টার। এই প্রতিষ্ঠানটির ট্রেড লাইসেন্সে নরসিংদী পৌরসভার মেয়র জনাব আমজাদ হোসেন বাচ্চুর স্বাক্ষর স্ক্যান করে বসানো হয়েছে। অংকিতা ল্যাপটপ সেন্টারের ট্রেড লাইসেন্সের নিবন্ধন নং-১২৫৭/২২২ এর সাথে পৌরসভার লাইসেন্স ভলিয়ম বহির মিল নেই।
গনেশ কর্মকার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের নামে সিল বানিয়ে দাপ্তরিক বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করে। এই রকম সিলগুলো (১) ডা: মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, সিভিল সার্জন নরসিংদী, (২) মোহাম্মদ জসিম উদ্দন প্রকল্প পরিচালক, ডাল ও তৈলবীজ উৎপাদনের মাধ্যমে টেকসই পুষ্টি নিরাপত্তা জোরদারকরন প্রকল্প, বিএডিসি, ঢাকা (৩) ডা: সুলতানা রাজিয়া, সিভিল সার্জন, নরসিংদী (৪) প্রফেসার ফারহান সাদিক, বাংলা বিভাগ, নরসিংদী সরকারি কলেজ, (৫) ড. আবু রেজা মো: মাহফুজুর রহমান সিনিয়র সহকারী পরিচালক, ডাল ও তৈলবীজ ক: গ্রো: জোন, বিএডিসি, নরসিংদী, (৬) ননী গোপাল মঞ্জুমদার, ডেপুটি ডাইরেক্টর, বাংলাদেশ ব্যাংক, মতিঝিল, ঢাকা, (৭) ডা: মো: সোহেল রানা, এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য) মেডিকেল অফিসার, সদর হাসপাতাল, নরসিংদীদের নামে বানানো হয়েছে। গনেশ কর্মকার এই সব সিল চাকুরী প্রার্থী বিভিন্ন লোকজনের কাগজপত্র সত্যায়িত করা সহ তার দাপ্তারিক কাজে ব্যবহার করে।
গনেশ অফিসের পরিবহন সার্ভিসিং, জেনারেটর মেরামত, গাড়ি মেরামত ও মোটর সাইকেল মেরামত , শস্যের মেশিন মেরামত, হিমাগারের এসি ইত্যাদি মেরামত, সার্ভিসিং এর ভূয়া ভাউচার (১) মেসার্স শাহরিয়ার এন্টারপ্রাইজ, প্রো: মো: শাহরিয়ার মুন্সি, কোর্ট রোড, ব্রাক্ষণবাড়িয়া, (২) ভাই ভাই মটরস ওয়ার্কসপ, ১১০/২ দারুস সালাম, মীরপুর, ঢাকা, (৩) মেসার্স তাওহীদ এন্ড তামজীদ ব্রাদার্স, ২৩১/৭ বাসাইল, নরসিংদী সদর, নরসিংদী (৪) প্রোপাইটার মেসার্স বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজ (৫) রাজধানী মটর ওয়ার্কসপ, ১২৮/১ দারুস সালাম, মীরপুর, ঢাকা- ১২১৬ (৬) প্রোপাইটার, এনআই করপোরেশন (৭) এক্সট্রা পাওয়ার, বাংলাদেশ নামের সিল বানিয়ে এই সিলের মাধ্যমে জাল স্বাক্ষর করে ভাউচার দাখিল করে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করেন।
গনেশ কর্মকার, তার ভাই পরেশ কর্মকার ও মামা শশুর শুভঙ্কর কৃষি বিভাগ, পুলিশ বাহিনী, প্রাইমারী শিক্ষক, আনসার ব্যাটালিয়ানে চাকুরী দেবার নামে চাকুরী প্রার্থীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা গ্রহন করে। তারা হোয়াটসঅ্যাপে লোকজনদের সাথে কথা বলে এবং গনেশের শ্বশুরের নগদ, বিকাশ নাম্বার ও সরাসরি টাকা গ্রহন করে।
সম্প্রতি দুর্নীতি বানিজ্যের মাধ্যমে শুভংকর কৃষি অফিসে কম্পিউটার অপারেটর হিসাবে চাকুরীতে যোগদান করেছে। গনেশ কর্মকার গং বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীতে ব্যাটালিয়ান আনসার পদে চাকুরী পাইয়ে দেবার বিনিময়ে চাকুরী প্রার্থী খোকন মন্ডল পিতা- হরিপদ মন্ডল মাতা- আমুদিনি মন্ডল ঠিকানা- গুহলি কেদারপুর, নাগরপুর, টাঙ্গাইল এর নিকট থেকে ৩লক্ষ টাকা গ্রহন করেন। কিন্তু তাকে চাকুরী দিতে ব্যর্থ হন গনেশ।
২০২২ সালে পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকুরি পাইয়ে দেবার বিনিময়ে চাকুরী প্রার্থী দূর্জয় শীল পিতা- সংকর চন্দ্র শীল মাতা- ফুলমালা রানী শীল ঠিকানা- টাঙ্গাইলের এর নিকট থেকে ২ লক্ষ টাকা গ্রহন করে। কিন্তু তাকে চাকুরী দিতে পারে নাই।
নিয়ম বর্হিভূত ভাবে সে তার কার্যালয়ের একটি কক্ষে নিজের থাকার রুম বানিয়েছে। রাতের বেলা গনেশ কর্মকার তার বন্ধুদের নিয়ে তার কক্ষে মদ্য পান করে। মাঝে মাঝে নারী এনে ফূর্তি করে। গনেশ কর্মকারের নামে বরাদকৃত সরকারি মোটর সাইকেল নিয়ম বর্হিভূত ভাবে তার ভাই পরেশ কর্মকার ব্যবহার করছেন। কিছুদিন পূর্বে পরেশ কর্মকার সরকারি মোটর সাইকেল নিয়ে দুর্ঘটনায় পতিত হন এবং তার একটি পা ভেঙ্গে যায়।
গনেশ কর্মকারের দূর্নীতির প্রতিবাদ করলেই সে উপর মহলে প্রভাব খাঁটিয়ে প্রতিবাদকারীকে বদলী করে দেয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, কৃষিমন্ত্রীর পিএস, বন ও পরিবেশ মন্ত্রনালয়ের সচিবের প্রভাব খাঁটিয়ে গনেশ কর্মকার দূর্নীতির গড ফাদারে পরিনত হয়েছে। সে তার অফিস প্রধানের সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে এবং অফিস প্রধানকে অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দিয়ে প্রতিমাসে সরকারি লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করছে।
উক্ত বিষয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে তিনি সাংবাদিকদের সাথে খারাপ আচরন করেন ও দেখে নেওয়ার হুমকি প্রদান করেন।
বিস্তারিত আরও আছে…
caller_get_posts
is deprecated. Use ignore_sticky_posts
instead. in /home/somoynewsbd/public_html/wp-includes/functions.php on line 5667caller_get_posts
is deprecated. Use ignore_sticky_posts
instead. in /home/somoynewsbd/public_html/wp-includes/functions.php on line 5667
Leave a Reply