ঐশ্বর্য সরোয়ার অপূর্ব,জবি প্রতিনিধি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কারাবন্দী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সোমবার (২৮ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্ত চত্বরে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরাসহ প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থীর উপস্থিতিতে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মিনহাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমি শিক্ষকদের প্রতিনিধি হয়ে নয়, নিজের তাড়না থেকে আজকের মানববন্ধনে উপস্থিত হয়েছি। একই অভিযোগে অভিযুক্ত দেলোয়ার মুক্ত অবস্থায় কানাডায় রয়েছে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ এক শিক্ষার্থীকে বিনা বিচারে আটক করে রাখা হয়েছে দীর্ঘ এক বছর। আইনের এই বৈষম্যতায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, অবিলম্বে খাদিজাকে জামিনে মুক্তি দিয়ে তার শিক্ষাজীবন ফিরিয়ে দিতে হবে।
সমাবেশে উপস্থিত খাদিজার বোন সিরাজুম মনিরা বলেন, আমার বোন এমন কী অপরাধ করেছে যে আজ এক বছর ধরে আটক থাকতে হচ্ছে। জেলে দেখা করতে গেলে সে জিজ্ঞাসা করে, কেন আমি এতদিন কারাগারে। তখন আমাদের কাছে কো্নো উত্তর থাকে না। ফেব্রুয়ারিতে মামলার শুনানির কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত তা শুধু পিছিয়েই গেছে।
অবস্থান কর্মসূচিতে মুঠোফোনে যুক্ত থেকে কান্নাজড়িত কন্ঠে খাদিজার মা বলেন, আমার মেয়ে কী দোষ করেছে? আজ ৩৬৫ দিন হচ্ছে আমি আমার মেয়েকে নিয়ে ঘুমাতে পারি না। প্রতিটি রাত আমার জন্য কালরাতের মতো মনে হয়। আমার মেয়ে বিনা বিচারে এক বছর যাবত জেলখানায় পড়ে আছে। তার কিডনিতে সমস্যা ধরা পড়েছিলো ২০২০ সালে। এখন পর্যন্ত কারা কতৃপক্ষ তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেনি। আমি আমার মেয়েকে জীবিত ফেরত চাই, এই ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন বাতিল চাই। যেন আমার মতো আর কোনো মাকে এমন যন্ত্রণা সহ্য করা না লাগে।
খাদিজার সহপাঠী রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তাসলিমা জাহান মুন বলেন, বাকস্বাধীনতা বলে আমাদের যে একটি সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে সেটার সুফল আমরা কোথায় পাচ্ছি? আজ দেশে যদি বাকস্বাধীনতা থাকত তাহলে আমার সহপাঠীকে বিনা বিচারে এক বছর কারাগারে থাকতে হত না। আমরা যদি বাকস্বাধীনতার সুফল না পেয়ে থাকি তাহলে সংবিধান থেকে বাকস্বাধীনতার বিষয়টি তুলে নেওয়া উচিৎ।
প্রসঙ্গত, অনলাইনে সরকারবিরোধী বক্তব্য প্রচারসহ দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণের অভিযোগে ২০২০ সালের অক্টোবর খাদিজা ও অবসরপ্রাপ্ত মেজর দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রাজধানীর কলাবাগান ও নিউমার্কেট থানায় দুটি মামলা করে পুলিশ। খাদিজাতুল কুবরার নামে ২০২০ সালে যখন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয় তখন তার বয়স ১৭ বছর। অথচ তাকে প্রাপ্তবয়স্ক দেখিয়ে মামলাটি করা হয় এবং সেই মামলায় আজ ৩৬৫ দিন ধরে খাদিজা কারাগারে দিনাপাত করছে। তবে তিনি যে মামলায় গ্রেফতার আছেন, সেই মামলার বিচার শুরু হয়নি এখনো।
এদিকে গত জুলাইয়ে আপিল বিভাগের এক আদেশে আগামী ১০ নভেম্বর পর্যন্ত (৪ মাস) তার জামিনসংক্রান্ত আবেদনের শুনানি স্ট্যান্ডওভার (মুলতবি) রাখা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এতে ধারণা করা হচ্ছে, এর আগে তার জামিনসংক্রান্ত আবেদন শুনানির সুযোগ নেই।
caller_get_posts
is deprecated. Use ignore_sticky_posts
instead. in /home/somoynewsbd/public_html/wp-includes/functions.php on line 5667caller_get_posts
is deprecated. Use ignore_sticky_posts
instead. in /home/somoynewsbd/public_html/wp-includes/functions.php on line 5667
Leave a Reply