কুবি প্রতিনিধি:
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামানকে গাড়ি সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে পথরুদ্ধ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি। এই কাজে বাঁধা দিয়েছে শিক্ষকদের আরেকটি পক্ষ। এতে করে শিক্ষদের দুই পক্ষের মধ্যে বাকবিতন্ডার ঘটনা ঘটেছে।
শনিবার (২৭ এপ্রিল) বিকাল পাঁচটা থেকে রাত সাড়ে ৮ টা পর্যন্ত পথরুদ্ধ অবস্থায় মূল ফটকে গাড়িতে অবস্থান করছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ। সর্বশেষ তিনি গাড়ি থেকে নেমে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বাংলোতে গিয়েছেন উদ্ভুত পরিস্থিতির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানার জন্য।
এর আগে বিকেল সাড়ে চারটা থেকে শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কার্যালয়, কোষাধ্যক্ষের কার্যালয় এবং প্রক্টরের কার্যালয়ে তালা দিতে যায়। সেসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ও প্রক্টরের দপ্তরে তালা ঝুলিয়ে উপাচার্যের কার্যালয়ে তালা মারতে গেলে তারা দেখেন প্রশাসন থেকে আগে থেকেই উপাচার্য দপ্তরে তালা মারা। ফলে উপাচার্য দপ্তরে তালা মারতে পারেননি তারা।
পরবর্তী সময়ে তারা প্রশাসনিক ভবন থেকে বের হয়ে দেখেন কোষাধ্যক্ষ তার গাড়ি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন। এসময় তারা মূল ফটকে অবস্থান নেন এবং তাদেরকে কোষাধ্যক্ষকের গাড়ির চাবি দিয়ে চলে যেতে বলেন। কিন্তু ট্রেজারার তাদের কথার সাথে একমত না হওয়ায় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক বন্ধ করে কোষাধ্যক্ষকে পথরুদ্ধ করেন।
শিক্ষক সমিতি কোষাধ্যক্ষের পথরুদ্ধ করা অবস্থায় শিক্ষকদের একটি অংশ শিক্ষক সমিতির সাথে তালা লাগানো নিয়ে বাকবিতন্ডা করেন। এ সময় তারা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে তালা সংস্কৃতি বন্ধ চান বলে মন্তব্য করেন। এ ব্যাপারে লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. রশিদুল ইসলাম শেখ বলেন, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল,ভর্তি পরীক্ষার দিন কর্মসূচির আওতামুক্ত থাকবে। কিন্তু তারা পরবর্তীতে লিখলো শিথীল থাকবে। এটা এক প্রকার প্রতারণা। আমরাও শিক্ষক সমিতির সদস্য। এভাবে শিক্ষক সমিতি খেয়াল খুশি মত চলতে পারে না। আমরা এই তালা সংস্কৃতি থেকে মুক্তি চাই। কিছু হলেই তালা লাগিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মনে করি। শিক্ষক সমিতিকে নেতৃবৃন্দ যে প্রতারণা করলো সাধারণ শিক্ষকদের সাথে সেই প্রতিবাদে আমরা এখানে এসেছি।’
এ ব্যাপারে কুবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সহযোগী অধ্যাপক মেহেদী হাসান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের যত অনিয়ম হচ্ছে তার সহায়ক হচ্ছেন কোষাধ্যক্ষ। আর এই অনিয়মগুলো তিনি চালু করেছেন। অর্থ কমিটির বিশৃঙ্খলা, শিক্ষকদের টাকা পয়সা বিভিন্ন খাতে ব্যায় করা সহ এই যে প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা তার সবকিছুর পেছনে তিনি আছেন। এই কারনে শিক্ষকরা সাধারণ সভায় তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন সেই কারনে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন পরিসেবা পাবেন না।’
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, ‘আমাদের মূল দায়িত্ব হলো শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। প্রক্টর হিসেবে যদিও শিক্ষার্থীদের উপরে আমার দায়িত্ব তারপরেও সার্বিক শৃঙ্খলার ব্যাপারটা আমাদের উপরে আসে। আজকে গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা ছিলো। আজকে রাষ্ট্রপতি মনোনীত কোষাধ্যক্ষকে তারা এভাবে পথ আটকে দিয়েছে। আমি মনে করি শিক্ষক হিসেবে তারা নৈতিকতার জায়গা লঙ্ঘন করেছে।’
গাড়িতে থাকা কুবি কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় নেতৃত্ব দিচ্ছে উপাচার্য স্যার। এখন বিশ্ববিদ্যালয়কে সঠিকভাবে এগিয়ে নিতে, সচল রাখতে কি করনীয় সে বিষয়ে স্যারের সাথে কথা বলার জন্য যাচ্ছি।’
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মইনকে ফোন দেয় হলে তার ফোন নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।
উল্লেখ্য, গত ২৩ এপ্রিল শিক্ষক সমিতি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর একটি চিঠিতে তাদের সাতটি দাবি মেনে নেয়ার জন্য ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেয়। শিক্ষক সমিতির দেয়া সাত দাবি ২৪ ঘন্টার মধ্যে বাস্তবায়ন না হওয়ায় ২৫ তারিখ সকালে শিক্ষক সমিতি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষের ও প্রক্টরকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তাদের কার্যালয়ে তালা দেন। তবে ২৭ এপ্রিল গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা থাকায় শিক্ষক সমিতি তাদের কর্মসূচি শিথীল করে এবং তালা খুলে দেয়। তবে আজকের (২৭ এপ্রিল) অফিস সময়সূচি শেষ হওয়ার পর তারা আবার তালা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন দপ্তরে।