হৃদয় শিকদারঃ
ঢাকার গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুরে চীনা নাগরিক কর্তৃক বাঙালি নারীকে গণধর্ষনের অভিযোগ উঠেছে।
গত মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুর থানার ২ নং ওয়ার্ডে মোজারমিল ডালাসসিটি এর লাল বিলিং এলাকায় সাদিকুল ইসলামের ৬তলা বাড়িতে ভুক্ত ভুগী বাঙালি নারী বানু(৪১) এর সাথে এই নিকৃষ্ট ঘটনা ঘটায়।
ভুক্তভোগী বানু তার অভিযোগে জানায়, গত এক মাস পূর্বে চীনা নাগরিক ওয়াং চাও ইয়ং ( আব্দুর রহমান) এফিডেভিট করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক বানু বিয়ে করে। বিয়ের পর তারা গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এর ২নং ওয়ার্ডে মোজারমিল ডালাসসিটি এলাকায় সাদিকুল ইসলামের একটি ছয় তলা বাড়িতে ফ্লাট ভাড়া নিয়ে ঘর সংসার করতে থাকে। ঘটনার দিন গত ২৩ আগস্ট শুক্রবার অন্যান্য দিনের মতো ভুক্তভোগী খাওয়া দাওয়া করে শুয়ে পড়ে এবং তার স্বামী ওয়াং চাও ইয়ং (আব্দুর রহমান) পাশের ফ্লাটে বসবাসরত দুই চাইনিজ ইয়াং জিং এবং ওয়াং জাও ফিং নিকট গল্প করতে যায়।
পরবর্তীতে আনুমানিক রাত ১০:৪৫ তার স্বামীর ভাই ইয়াং জিং(৪১) বানুর রুমে প্রবেশ করে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। পরবর্তীতে ওই চাইনিজ রুম থেকে বের হতেই আনুমানিক ১১.৪৫ এ অপর চাইনিজ ওয়াং জাও ফিং (৪৫) ভুক্তভোগী রুমে ঢুকে পুনরায় ধর্ষণ করে। এ সময় ভুক্তভোগী চিৎকার চেঁচামেচি করলেও তার স্বামী ওয়াং চাও ইয়ং (আব্দুর রহমান ২৮) তাকে উদ্ধারে কোনরকম সহায়তা করেনি।
পরবর্তীতে ভুক্তভোগী বাড়ি থেকে পালিয়ে এসে কাশিমপুর থানায় এসেও অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করে কাশিমপুর থানার অফিসার্স ইনচার্জ জাহিদুল ইসলাম জাহিদ বলেন, ভুক্তভোগী বানু কাশিমপুর থানায় এসে অভিযোগ দায়ের করেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে এবং ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (সংশোধনী ২০২০) এর ৯(৩)/ ৩০ ধারা অনুযায়ী মামলা দায়ের করা হয়েছে। যার মামল নং ০৪/২৭-০৮-২০২৪ইং। পরে ভুক্তভোগী বানু কে ফরেনসিক রিপোর্ট এর জন্য শহীদ তাজউদ্দিন মেডিকেল কলেজ এ প্রেরণ করা হয়েছে।
প্রতারনা:- চায়না নাগরিকরা বাংলাদেশে বিভিন্ন জায়গায় ব্যবসা বাণিজ্য করতেছে, কিছু কিছু চাইনিজ বাংলাদেশি মুসলিম মেয়েদেরকে বিয়ে করতেছে। এদের মধ্যে অনেকেই প্রতারণা করছে, বাঙালি মেয়েদের কে বিদেশে পাচার করছে। এটিএন নিউজে এ বিষয়ে একটা নিউজ হয়েছে এর আগে, গাজীপুরের কাশিমপুরের ঘটনাটি হুবহু তাই।
ঘটনা : ভুক্তভোগীর বক্তব্য অনুযায়ী, গাজীপুরের কাশিমপুর ডালাসসিটি এলাকায়, প্রতারক কয়েকজন চাইনিজ নাগরিক সেখানে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করে, তাদের মধ্যে একজন এক মুসলিম বাঙালিকে বিয়ে করেছে, সেই মহিলাও এই চক্রের সক্রিয় সদস্য। নাম নিলা, নিলার মালিকানাধীন এখানে দুটি ফ্যাক্টরি রয়েছে সেখানে চুলের ক্যাপ তৈরি করেন তারা।
যেভাবে বাঙ্গালী নারী সংগ্রহ করা হয়: – এদের বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে মহিলা ও পুরুষ এজেন্ট নিয়োগ করা আছে, যারা মহিলা গার্মেন্টস কর্মীদের বিভিন্ন প্রলোভনে চাইনিজ নাগরিককে বিয়ে করতে রাজি করানোর কাজ করে থাকে, তাদের টার্গেট সাদাসিধা এবং অতি দরিদ্র পরিবারের মেয়েরা।
দালালরা যেভাবে সখ্যতা তৈরি করে :- একসাথে কাজ করার সুবাদে এরা সহজেই ভিকটিমের সাথে মিশে যেতে পারে, তারা প্রস্তাব দেয় অমুক চাইনিজ তোমাকে পছন্দ করেছে বিয়ে করতে চায়, এরপর তারা সেই চাইনিজ কে নিয়ে কয়েকজন মিলে মেয়ে দেখতে যায়, মেয়ে দেখে ফিরে আসার সময় মেয়ের হাতে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকাও দিয়ে দেয় (মেয়ে দেখার দক্ষিণা) এরপর মেয়ে দেখে চাইনিজরা বের হয়ে গেলে সেই এজেন্ট মেয়েকে বলে, সে তোমাকে অনেক পছন্দ করেছে সে তোমাকেই বিয়ে করতে চায়, তুমি চাইলে সে তার ধর্ম ত্যাগ করে মুসলিম হতে রাজি আছে। একথা শোনার পর ভিকটিম ভাবে, আমার জন্য ধর্ম ত্যাগ করতেছে, বিদেশি নাগরিক, নানান রকম সুযোগ-সুবিধা, বিয়ে করা যায়। এই ভেবে ভিক্টিম রাজি হয়ে যায়। এরপর তাদের নিজস্ব কাজী থাকে উকিল থাকে, তারা মেয়ের সামনেই সেই চাইনিজকে মুসলিম করে, বিয়ে পড়ায়,(সত্য হতে পারে আনার নাটকও হতে পারে) এরপর তারা একসাথে সংসার করতে থাকে, কিছুদিন পর তার পাসপোর্ট তৈরি করে এবং তার সাথে চায়না নিয়ে যায়, এরপর আর সেই বউয়ের কোন খোঁজ খবর পাওয়া যায় না। ভিক্টিম এর তথ্য অনুযায়ী কাশিমপুরের এই প্রতারক চক্র ৪ থেকে ৫ জন নারীকে পাচার করেছে, তবে আমার কাছে সুনির্দিষ্ট কোন প্রমান না থাকায় সেগুলো নিয়ে জোড়ালো ভাবে কিছু বলতে চাচ্ছি না।
ভিকটিমের বক্তব্য – উপরে বলা কৌশল অবলম্বন করেই তার সাথে বিয়ে হয় গত মাসে, এরপর থেকে সে তার চাইনিজ স্বামীর সাথে একসাথে বসবাস করছে উপরে উল্লেখিত ভাড়া বাসায়। গোলমাল শুরু হয় গত শুক্রবার থেকে, গত শুক্রবার রাতে ওই নারীর সাথে তার স্বামী ব্যতীত ওই বাড়িতে তার ফ্লাটে ঢাকা বাকি চাইনিজরা (এদের মধ্যে কেউ তার বন্ধু আবার কেউ তার ভাই বলে পরিচিত) সে মেয়েটার সাথে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক করে। এবং ওই রাতের পর থেকে তাকে গৃহবন্দী করা হয় শেয়ার ঘর থেকে বের হতে পারছি না, গত রবিবার রাত আনুমানিক আটটার দিকে এই মহিলা সেখান থেকে পালাতে সক্ষম হয়, সে ৯৯৯ সহ বিভিন্নভাবে প্রশাসনের সাহায্য সহযোগিতা চেয়ে ব্যর্থ হয়, কোন না কোনভাবে সে একজন সংবাদ কর্মীর নাম্বার পায় এবং তার সাথে যোগাযোগ করলে সেই সংবাদ কর্মী তার কয়েকজন সহকর্মীকে নিয়ে ওই মহিলাকে উদ্ধার করে। এরপর রাত দশটার দিকে, অভিযোগ দায়েরের জন্য ওই মহিলা কাশিমপুর থানার উদ্দেশ্য রওনা হয়, তাকে সহায়তার উদ্দেশ্যে কয়েকজন সংবাদ কর্মী তার সাথে যায়। রাত ১২ঃ০০ টা থেকে ভোর চারটা পর্যন্ত অভিযোগ না নিয়ে ওই মেয়েকে নানান ভাবে হয়রানি করতে থাকে পুলিশ। (গোপনে ধারণকৃত ভিডিও আছে) ভোর চারটার দিকে সংবাদ কর্মীরা লাইভ করতে চাইলে, প্রশাসন মামলা নিতে রাজি হয়, কিন্তু ঊর্ধ্বতন কার সাথে যেন কথা বলে মামলা না নিয়ে ভিকটিমকে সাথে নিয়ে ঘটনাস্থলে রওনা হয় পুলিশ, সাথে সংবাদ কর্মীদেরও যেতে বলে। ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর, পূর্ব পরিচিত বন্ধুবান্ধবের মত আসামিদের সাথে পুলিশ খোশ-গল্পে মেতে ওঠে। এবং সাংবাদিকদেরকে দেখিয়ে আসামিদেরকে উদ্দেশ্য করে বলে এদের ফোনে ভিডিও আছে এদেরকে ধরে ভিডিও ডিলিট করে দেন, এরপর আসামিরা সদলবলে সংবাদ কর্মীদের ঘেরাও করে তাদের মুঠো ফোন থেকে সকল ভিডিও রিমুভ করে দেয়।
ওই নারীর করা অভিযোগ, তার বলা কথাগুলো সত্য বা মিথ্যা হতে পারে, কিন্তু ওই নারীর সাথে কাশিমপুর থানায় যাওয়ার পর থেকে শুরু করে পরদিন সকাল ছয়টা পর্যন্ত ঘটে যাওয়া সকল ঘটনাগুলো সত্য, এগুলো সব আমাদের চোখের সামনে ঘটেছে। সুতরাং আমার ধারনা ওই মহিলার অভিযোগ সত্য হতে পারে।
সাংবাদিক লাঞ্চিত:- সংবাদ কর্মী সাব্বির আহমেদ এর বক্তব্য কাশিমপুর থানা পুলিশের দাবি চাইনিজ নাগরিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা এত সোজা না, কোন অভিযোগ আসলেই তাদেরকে আইনের আওতায় আনা সম্ভব না ইত্যাদি। যদিও দেশের বিভিন্ন স্থানে চীনের পাচার করার ঘটনা ঘটছে অহরহ, নিউজ হচ্ছে, কিন্তু কাশিমপুর থানা কেন এরকম আচরণ করল ইহা আমার বোধগম্য হয়নি।
ঐদিন সারারাত পার হয়ে যখন ভোর হলো, তখনো কিছু সংবাদকর্মী ওই বাড়ির গেটের বাইরে ছিল, সাব্বির আহমেদ এবং সেলিম, অন্যরা মাঝেমধ্যে পুলিশের সাথে গেটের ভিতরে ঢুকেছে আবার বের হয়েছে, এদের মধ্যে সংবাদকর্মী রেজাউল এবং রবিউল সাথে ছিলেন।
ফজরের নামাজের পরে মসজিদ কমিটির লোকজন ওই বাসার গেটের সামনে চলে আসে, আমি সেখানে লাইভ করছিলাম, ওরা আমার লাইফ বন্ধ করতে বলে, এবং পুলিশ সদস্যরা আমার ফোনে ভিডিও আছে সেগুলো ডিলিট করার জন্য মসজিদ কমিটির লোকজন সহ ওখানে উপস্থিত অন্যান্যদের বলে, এরপর ওরা আমার ফোনে থাকা লাইভ ও সকল ভিডিও ডিলিট করে দেয়, সেখানে কাশিমপুরের স্থানীয় এক সাংবাদিক মোহাম্মদ আলী সীমান্ত উপস্থিত ছিল, সে ও মানুর মধ্যে সেখানে তর্ক বিতর্ক লেগে যায়, সে মানুর পরিচয় জানতে চাইলে মানু তার পরিচয় দিলে উল্টো সে কিসের সাংবাদিক এটা জিজ্ঞেস করে এতে হাতাহাতির পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে মোহাম্মদ আলী সিমান্ত আর মানু’র সাথে সংঘর্ষ বাধতে পারে এরকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আগে পুলিশের সামনেই মানুকে এবং মোহাম্মদ আলী সিমান্তকে আলাদাভাবে সরিয়ে মানুকে রিকশায় উঠিয়ে দেওয়া হয়, তখন ঘটনাস্থল থেকে ভুক্তভোগী সেই নারী এবং রেজাউল চলে যায়, পরে সাব্বির আহমেদ, সেলিম রেজা,রবিউল ইসলাম পুলিশের সাথে থেকে যায়। এদের মধ্যে দুইজন সাব্বির আহমেদ ও সেলিম রেজা ওখানে আর কাউকে দেখতে না পেয়ে ভেবে চলে যায়, কিন্তু উপস্হিত পরিস্হিতি দেখে রবিউল ওই বাড়ির ছয়তলায় আশ্রয় নেয়, পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক ভেবে ঘন্টাখানেক পর রবিউল সেখান থেকে নিচে আসে এবং ওই বাড়ির বাড়িয়ালা সহ অন্যান্যদের নজরে আসায় উপস্থিত কয়েকজন মোহাম্মদ আলী সিমান্তর ইশারায় সবাই রবিউলকে ঘিরে ধরে এবং তাকে লাঞ্ছিত করে, কান ধরে উঠবস করায় সেই সাথে পা ধরে মাফ চাওয়ায় এবং রবিউলের ফোনের সকল ভিডিও ডিলিট করে দেয়।