নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
গাজীপুর বিআরটিএ অফিসে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা অহিদুজ্জামানের নেতৃত্বে চলছে বেপরোয়া ঘুষ বাণিজ্য। ঘুষ না দিলে মেলে না সেবা। গাজীপুর বিআরটিএ অফিস লুটেপুটে খাচ্ছে ওয়াহিদুজ্জামান এর নেতৃত্বে একটি চক্র। মোটরযান পরিচালক হিসেবে পরীক্ষা নেওয়ার দায়িত্ব ওয়াহিদুজ্জামানের হলেও গাজীপুর বিআরটিএ অফিসে দালালরাই নিয়ন্ত্রণ করে ড্রাইভিং লাইসেন্স গ্রহীতাদের পরীক্ষা। প্রতিটি লাইসেন্স গ্রহিতার পরীক্ষা বাবদ নগদ ৪০০ টাকা করে গ্রহণ করেন এসব দালালরা। বিআরটিএর মাঠ থাকা সত্ত্বেও গরুর হাটে চলে ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষা।
বাংলাদেশের সর্বত্রের মানুষ গাজীপুর বিআরটিএ অফিসে গাড়ি ও ড্রাইভিং এর নতুন লাইসেন্স অথবা রিনিউ করতে আসে। কিন্তু এখানে আগত মানুষ তাদের কাংখিত সেবা না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যান নতুবা ঘুষ দিয়ে তাদের কাজ সম্পূর্ণ করতে হয়। ঘুষ না দিলে তাদের কাজ আর সম্পূর্ণ হয়না। ভোক্তাদের কাছে এবিষয়ে জনশ্রুতি রয়েছে গাজীপুর বিআরটিএ অফিস মানেই টাকার খেলা।
আর তাতে করেই ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে যেমন সরকারের রাজস্ব, ঠিক তেমনি করেই ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছেন সাধারণ সেবাপ্রার্থীরা। তাতে কোনরকমের ভ্রুক্ষেপ নেই বিআরটিএর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের। তারা দেদার চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের এই ঘুষ বানিজ্যসহ নানান অপকর্ম।
তথ্যসূত্রে জানা যায়, লার্নার পরীক্ষায় পাশ, রোড পারমিট, গাড়ির রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস, ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ বিআরটিএর প্রতিটি সেবা খাতই ঘুষ বানিজ্যে নিমজ্জিত । আর এ ঘুষ বাণিজ্যের প্রধান পৃষ্ঠপোষক গাজীপুর বিআরটিএ সার্কেলের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) মো. আবু নাঈম ও মোটরযান পরিদর্শক ওয়াহিদুর রহমান। দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা গাজীপুর বিআরটিএ কার্যালয়ের এই তথ্যচিত্র উঠে এসেছে। ফিটনেস, লার্নার পাস, মালিকানা পরিবর্তন, রেজিস্ট্রেশন এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স সংক্রান্ত সকল কাজে ঘুষ বাণিজ্য যেন তাদের কাছে ওপেন সিক্রেট।
অভিযোগ রয়েছে, অনলাইনে লার্নার আবেদনকারীদের সপ্তাহে ৩দিন পরীক্ষার সময় ধার্য করা হয়। পরীক্ষার দিন মোটরযান পরিদর্শক ওয়াহিদুর রহমান লার্নার পাশ বাবদ পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে নিজস্ব দালালের মাধ্যমে দুই হাজার পাঁচশত(২৫০০) টাকা ঘুষ নিয়ে থাকেন। এই ঘুষ বাণিজ্য থেকে ছাড় পাননি খোদ তার নিজ অফিস কলিগ। এভাবেই অদক্ষ চালকদের কাছ থেকে লার্নার পাশের নাম করে মাসে প্রায় ২০ থেকে ৩০ লক্ষ টাকার ঘুষ আদায় করেন এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ওয়াহিদুর রহমান। জানা যায়, তার এই বেপরোয়া ঘুস বানিজ্যের পিছনে প্রধান পৃষ্ঠপোষকতায় রয়েছেন গাজীপুর বিআরটিএ সার্কেলের সহ-পরিচালক (ইঞ্জিঃ)মো. আবু নাঈম।
এছাড়াও সেবার নামে গ্রাহক হয়রানি ও ঘুষ দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে গাজীপুর বিআরটিএ সার্কেলের সহকারী পরিচালক মো. আবু নাঈমের বিরুদ্ধে। গাজীপুরে যোগদান করার পর থেকেই ঘুষ লেনদেনে বে-পরোয়া হয়ে উঠেন তিনি। গ্রাহক থেকে শুরু করে কর্মকর্তা-কর্মচারী কেউ তার অত্যাচার থেকে রেহাই পায়না বলে অভিযোগ রয়েছে। সেবা নিতে আসা গ্রাহক দের ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা, গ্রাহক হয়রানি নিয়ে একাধিক অভিযোগ করলেও তেমন কোন সমাধান করেনি কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিনের গিয়ে দেখা যায়, সেবা নিতে আসা একাধিক গ্রাহক সহ-পরিচালক(ইঞ্জিঃ) মো. আবু নাঈমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকমের হয়রানি ও দুর্ব্যবহারের অভিযোগ করেন। গাজীপুর বিআরটিএ কার্যালয়ে গাড়ির ফিটনেস করাতে এসে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন অভিযোগ করে বলেন, এখানকার কর্মকর্তারা কাউকেই সময় দেন না। দালাল দিয়েই কাজ করাতে হয়। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কাজ করতে গেলে কোনো কর্মকর্তা কাজ করে না। আর যারা দালালদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করাচ্ছে সেখানে কাগজে দালালদের নাম লেখা বা কোনো সাংকেতিক চিহ্ন থাকে। এই চিহ্ন দেখে অফিসের কর্মকর্তারা কাজ করে। ঘুষ দিয়েই পাশ করা যায় ড্রাইভিং লাইসেন্সের পরীক্ষা, দক্ষতা প্রমাণের দরকার হয় না। ঘুষ দিয়েই ফিটনেস সার্টিফিকেট পাওয়া যায় ফিটনেসবিহীন গাড়ির।
বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। কারণ এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে সড়কের নিরাপত্তার বিষয়টি। আর এভাবেই অদক্ষ চালক লাইসেন্স পেয়ে গাড়ি চালালে অথবা সড়কে ফিটনেসবিহীন গাড়ি চললে এর পরিণতি কী হতে পারে, তা সবার জানা। বস্তুত এসব কারণেই দেশে সড়ক দুর্ঘটনা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
পাঠক গাজীপুর বিআরটিএ সার্কেলের সহ-পরিচালক আবু নাঈম, পরিদর্শক ওয়াহিদুর রহমান এর আরো জানান দুর্নীতির তথ্য চিত্রসহ বিস্তারিত জানুন। পর্বর্তী ২য় পর্বে জানুন।