নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
দেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে কর্মরত বিশেষজ্ঞরা সব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষেত্রে ‘নো ইলেকট্রিসিটি নো পে’ এমন নীতি বাস্তবায়নের দাবি তুলেছেন। এই নীতি কার্যকর হলে তা দেশের আর্থিক বোঝাও অনেক কমাবে বলে মনে করছেন তারা।
একইসঙ্গে তারা দেশে নবায়নযোগ্য শক্তিখাত পুরোদমে চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত বৃহদাকার ও গৃহস্থালিতে সৌর বিদ্যুতের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আমদানিতে সব ধরনের আমদানি শুল্ক কমানোরও জোর দাবি উত্থাপন করেছেন।
আজ বিয়াম ফাউন্ডেশনে তিনদিনব্যাপী বাংলাদেশ জ্বালানি সমৃদ্ধি ২০৫০ সম্মেলনের সমাপনী দিনে বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে এসব দাবি উঠে এসেছে।
বাংলাদেশে বিদ্যুতের চড়াদামের অন্যতম কারণেই হচ্ছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে দেওয়া ক্যাপাসিটি পেমেন্ট। এই পেমেন্ট গত কয়েক বছর ধরে বিদ্যুৎ খাতের ব্যয়ও বিপুল পরিমাণে বাড়িয়েছে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর আমাদের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর সক্ষমতার প্রায় ৪১% অব্যবহৃত ছিল। কেবল ২০২৩ অর্থবছরেই সরকার ২৬ হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ দিয়েছে।
বুয়েটের অধ্যাপক ইজাজ হোসেন সম্মেলনে প্রশ্ন করেন যে কেন এখন পর্যন্ত বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার কোনো নেট-জিরো টার্গেট ঠিক করতে পারেনি।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, “পরিবেশ মন্ত্রণালয় এখনও বাংলাদেশের নেট-জিরো লক্ষ্য ঘোষণা করেনি। আর এই কারণেই দেশে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়ছে না।”
এ প্রসঙ্গে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান তার সমাপনী বক্তব্যে বলেন, “এমনকি আমাদের ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশনে (এনডিসি) দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো অর্জন করাও খুবই চ্যালেঞ্জিং।
“অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সমর্থন পেলে অর্জন করা সম্ভব এমন নেট-জিরো লক্ষ্যমাত্রা বাংলাদেশও ঠিক করতে পারবে,” বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, “আমরা এখনও বিগত সরকারের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি। একই সাথে আমরা পরিবর্তন আনার সুযোগও পেয়েছি।”
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “সমন্বিত বিদ্যুৎ-জ্বালানি মহাপরিকল্পনা (আইইপিএমপি) অবশ্যই বাতিল হওয়া উচিত। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানো এবং বিদ্যুৎ মিশ্রণে নবানয়নযোগ্য শক্তির পরিমাণ বাড়ানো এমন মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে নতুন একটি বিদ্যুৎ-জ্বালানি মহাপরিকল্পনা বানানো ও কার্যকর করা উচিত।”
তিনি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা, যা ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ছিল না, তা নিশ্চিত করার ওপরও জোর দেন।
বাংলাদেশ সোলার অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি জাহিদুল আলম বলেন, “নবায়নযোগ্য জ্বালানির সংশ্লিষ্ট মালামালের আমদানি শুল্ক কমানো না গেলে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ কখনই ৩০ শতাংশ নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ-এর লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে পারবে না।”
নীতিনির্ধারক, অ্যাকাডেমিক, গবেষক, থিঙ্ক ট্যাঙ্ক, জ্বালানি কোম্পানি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, জলবায়ু ও মানবাধিকার কর্মী, আদিবাসী সম্প্রদায়, তরুণ, ছাত্র এবং ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের প্রায় ৪০০ প্রতিনিধির পক্ষে বিডব্লিউজিইডি-র সদস্য সচিব হাসান মেহেদী শেষদিন সম্মেলনের ঘোষণা পাঠ করেন। এ ঘোষণায় নীতি সমন্বয়, প্রাতিষ্ঠানিক ও পদক্ষেপগত সংস্কার, কার্যকর আর্থিক পদ্ধতি, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সহায়তা বৃদ্ধি এবং আরও উন্নত সামাজিক ও পরিবেশগত সুশাসনের মতো বিষয়ে জরুরিভিত্তিতে মনোযোগ দেওয়ার ওপর আলোকপাত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্রুপ অন ইকোলজি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিডব্লিউজিইডি), সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি), ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি), মিডিয়া রিসোর্সেস ডেভেলপমেন্ট ইনিসিয়েটিভ (এমআরডিআই), বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল ল’ইয়ারস এসোসিয়েশন (বেলা), মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ), অ্যাকশন এইড বাংলাদেশসহ প্রায় দুই ডজন সংগঠন যৌথভাবে এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে।