নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
রোববার জাতিসংঘের শান্তি কার্যক্রমের আন্ডার-সেক্রেটারি-জেনারেল জঁ-পিয়ের লাক্রোয়া-এর সাথে স্টেট গেস্ট হাউজ জামুনায় এক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি নারী শান্তিরক্ষী নিয়োগের আহ্বান জানান। এসময় তিনি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের অটল প্রতিশ্রুতির পুনর্ব্যক্ত করেন।
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বিষয়ক বিস্তারিত আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমি বিশেষভাবে উৎসাহিত করবো, শান্তিরক্ষা মিশনে আরও বেশি সংখ্যক বাংলাদেশি নারীর অংশগ্রহণে।”
বাংলাদেশ বর্তমানে শীর্ষ তিনটি শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশের (টিপিসিসি) মধ্যে রয়েছে, যেখানে ১১টি সক্রিয় মিশনের মধ্যে ১০টিতে ৫,৬৭৭ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী দায়িত্ব পালন করছেন।
জাতিসংঘের আন্ডার-সেক্রেটারি-জেনারেল শান্তিরক্ষায় নারীদের সম্পৃক্ত করার নীতি তুলে ধরে বলেন, “আমরা নারীদের নির্দিষ্ট ভূমিকায় সীমাবদ্ধ রাখতে চাই না।” তিনি যোগ করেন, শান্তিরক্ষার সকল ক্ষেত্রে নারী নিয়োগে জাতিসংঘ সহায়তা করবে।
প্রধান উপদেষ্টা প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত সেনা ও পুলিশ মোতায়েনে বাংলাদেশের প্রস্তুতি জানান এবং শান্তিরক্ষা সক্ষমতা প্রস্তুতির ব্যবস্থায় (পিসিআরএস) র্যাপিড ডিপ্লয়মেন্ট লেভেলে ৫ ইউনিট প্রদানের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
তিনি জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সদর দপ্তর ও মাঠ পর্যায়ে বাংলাদেশিদের নেতৃত্বে আরও বেশি প্রতিনিধিত্বেরও আহ্বান জানান। জাতিসংঘের কর্মকর্তা এ বিষয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
প্রধান উপদেষ্টা নিশ্চিত করেন যে, শান্তিরক্ষীদের নিয়োগে জাতিসংঘের ভেটিং প্রক্রিয়া বাংলাদেশ কঠোরভাবে মেনে চলে। মানবাধিকার নিশ্চিতকরণে প্রশিক্ষণ ও জবাবদিহিতায় জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংস্থার সাথে সহযোগিতা জোরদারে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
এসময় তাকে জানানো হয়, পররাষ্ট্র উপদেষ্টার নেতৃত্বে একটি বাংলাদেশি প্রতিনিধিদল ১৩-১৪ মে ২০২৫-এ জার্মানির বার্লিনে অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে যোগ দেবেন।
মিয়ানমার সংকট ও রোহিঙ্গা ইস্যুতে উদ্বেগে
প্রধান উপদেষ্টা মিয়ানমারে চলমান সংঘাত ও বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে নাফ নদী সংলগ্ন অঞ্চলে গোলাবর্ষণ, বেসামরিক হতাহত ও জীবন-জীবিকার ব্যাঘাত নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
তিনি সতর্ক করে বলেন, অব্যাহত অস্থিতিশীলতা পরিস্থিতিকে আরও ঘনীভূত করতে পারে, যা নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়াবে। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সম্মিলিত আন্তর্জাতিক উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
গতকাল জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস-এর বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের কথা স্মরণ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “তার এই সফর রোহিঙ্গাদের মধ্যে মিয়ানমারে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের নতুন আশা জাগিয়েছে।”