সময় নিউজ ডেস্ক:
পানি সম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, তরুণ প্রজন্মকে দূষণমুক্ত নদী দেখাতে হবে। দূষণমুক্ত নদী দেখতে কেমন হয় তা এখনকার প্রজন্ম দেখেনি। পরিবেশ ধ্বংস করে যে কোন উন্নয়ন হতে পারে না সেটি এই প্রজন্ম বুঝে গেছে। তার কারণ বাংলাদেশের তরুণেরা নেপালের তরুণদের সাথে সম্পৃক্ত, আমেরিকার তরুণদের সাথে সম্পৃক্, ইউরোপের তরুণদের সাথে সম্পৃক্ত। আমাদের দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের মত ভয়ংকর বিপর্যয়ের মুখোমুখি করেছি আমাদের পরের প্রজন্মকে। তিনি বলেন, এ বছরে বাংলাদেশে ৫০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গরম পড়েছে। এ বছরে যে বন্যা হয়েছে তা আগের সকল বন্যার ভয়াবহতাকে ছাড়িয়ে গেছে।
আজ(শনিবার) সকালে গাজীপুর পিটিআই অডিটোরিয়ামে ‘নদী বাচাঁতে যুব সম্মেলন’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় পানি সম্পদ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
গাজীপুরের তরুণদের নদী ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য নিয়ে সচেতন করা এবং তাদের সম্মিলিত শক্তি নদী রক্ষায় কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারে এ বিষয়ে আলোচনার জন্য পরিবেশবিদ, স্থানীয় প্রশাসন, দায়িত্বরত সরকারি সংস্থা, নদী রক্ষা সংগঠক এবং স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষার্থী ও যুবসমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে এই ‘নদী বাঁচাতে যুব সম্মেলন’ অনুষ্ঠিত হয়।
উপদেষ্টা আরও বলেন, নদী যেহেতু আমরা সৃষ্টি করতে পারবো না সুতরাং এটিকে আমরা কোনভাবেই ধ্বংস করব না এটাই হচ্ছে তরুণদের কাছে আজকে আমার প্রথম আহ্বান। প্রকৃতির সাথে লড়াই করে কেউ কখনো জিতেছে আর প্রকৃতি হেরেছে এরকমটি আমার জানা নেই বলে উপদেষ্টা তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করে বলেন, যে উন্নয়ন আমাদের বাতাসকে দূষিত করে, যে উন্নয়ন আমাদের নদী নদী মেরে ফেলে, যে উন্নয়ন কৃষি জমি নষ্ট করে ফেলে সে উন্নয়ন আসলে উন্নয়ন নয়।
উপদেষ্টা অনুষ্ঠানে নদী দখল এবং দূষণমুক্ত করতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে স্থানীয় প্রশাসনকে কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শুরু করার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, প্রয়োজনে নদী বাঁচাতে আমরা নদী দূষণকারী ২/১ টা শিল্প কারখানা বন্ধ করে দেব। পলিথিন শপিং ব্যাগ ব্যবহার বন্ধে উপদেষ্টা সকলকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন প্লাস্টিকের ব্যাগের পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব পাটের ব্যাগ নিয়ে আপনারা বাজারে যাবেন। তরুণ প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা দাবি তোলেন যে আপনারা যারা আমাদের নদী নষ্ট করেছেন আপনারা আমাদের নদী ঠিক করে দিয়ে যাবেন। কোদাল ধরতে হলে কোদাল ধরব সীমানার জন্য গাছ লাগাতে হলে গাছ লাগাবো।আপনারাই আমাদের অনুপ্রেরণা আপনারাই আমাদের সাহস। আপনাদের উন্নয়নের সঙ্গে থাকবে দূষণমুক্ত প্রবাহমান নদী।
সুস্থ নদী সুস্থ নগর, জানো যদি বাঁচবে নদী’ স্লোগানকে ধারণ করে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানের শুরুতে মালয়েশিয়া থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ‘Building Partnership for Environment’ শিরোনামে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট সেন্টারের রিভার কেয়ার ম্যানেজার ড.কালিদাসান কালিসাম।
প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু’র সভাপতিত্বে নদী বাচাঁতে যুব সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন গাজীপুর মহানগরের পুলিশ কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান,গাজীপুরের জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফীন, পানি উন্নয়ন বোর্ড কেন্দ্রীয় অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মোঃ রাফিউস সাজ্জাদ, পুলিশ সুপার ড. চৌধুরী মোঃ যাবের সাদেক, রিভার এন্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ, পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ড. মুঃ সোহরাব আলি, বাংলাদেশ কাটার সেকশন ড্রেজার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বশির আহমেদ, বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদক মালিক সমিতির সভাপতি রাশেদুল করিম মুন্না, মোঃ আনোয়ার হোসেন,প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ ওয়াটার ওয়ার্কস অ্যাসোসিয়েশন প্রমুখ। বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশন, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন এবং বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দল এই তিন সংস্থার সমন্বিত আয়োজনে ‘নদী বাঁচাতে যুব সম্মেলন’ অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানটির ইয়ুথ পার্টনার ছিল কানেক্টিং ইয়ুথ ফর চেঞ্জ(সিওয়াইসি)।