মঞ্জুর: বুধবার ১৫ জানুয়ারি জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে হেযবুত তাওহীদের আয়োজনে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, সংগঠনের ঢাকা মহানগর সভাপতি মাহবুব আলম মাহফুজ। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, হেযবুত তওহীদ একটি অরাজনৈতিক ধর্মীয় সংস্কারমূলক আন্দোলন। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে একটি সরকারের পতন ঘটেছে। পতনের পর যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় এসেছে, তারা রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিভাগের সংস্কারে মনোযোগ দিয়েছেন। এ লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে সংস্কার কমিশন গঠন করেছেন। কমিশনগুলো তাদের মতামত ও সংস্কার প্রস্তাব সরকারের কাছে জমা দিচ্ছে। রাষ্ট্রব্যবস্থার সংস্কারের ক্ষেত্রে সরকার সাধারণ জনগণসহ সব রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মহল থেকে সংস্কার প্রস্তাব আহ্বান করেছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে অরাজনৈতিক আন্দোলন হেযবুত তওহীদ গত ২৪ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদে সংবিধান সংস্কার কমিশনের কার্যালয়ে একটি লিখিত প্রস্তাবনা পেশ করে। এ প্রস্তাবনায় ৪৯টি বিষয়ের ওপর বিস্তারিত সুপারিশ তুলে ধরেন হেযবুত তওহীদের মুখপাত্র মো. মশিউর রহমানের নেতৃত্বাধীন ৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫৩ বছর পেরিয়ে গেলেও আমাদের দেশের রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, বিচার বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আমলাতন্ত্র, শিক্ষা বিভাগসহ অন্যান্য বিভাগ এখনো অনেকাংশে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক যুগের কাঠামো ও ধ্যানধারণার ওপর নির্ভরশীল। ঐতিহাসিক কারণে এটি অব্যাহত থাকলেও সময় ও পরিস্থিতির পরিবর্তনে এসব ব্যবস্থায় আধুনিকায়নের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। একাত্তরে স্বাধীনতার পর প্রণীত সংবিধানে ইতোমধ্যে ১৭টি সংশোধনী আনা হয়েছে। তবুও বর্তমান সংবিধানে এমন কিছু ধারা ও বিধান রয়েছে যা স্বৈরাচারী শাসনের সুযোগ তৈরি করতে পারে। তাই এ ক্ষেত্রে আরও কার্যকর সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত জরুরি। শুধু কাঠামোগত বা আংশিক সংস্কার করে কোনো কার্যকর ফল পাওয়া যাবে না। বরং রাষ্ট্রব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনই অপরিহার্য। এটাই ছিল ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের প্রধান দাবি, যাকে তারা ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণা’ বলে অভিহিত করেছেন। আমরা জানি, বিপ্লব মানে হলো পুরোপুরি আমূল পরিবর্তন আমাদের প্রস্তাবে স্পষ্ট করা হয়েছে যে, বর্তমানে কার্যকর রাষ্ট্র কাঠামো ঔপনিবেশিক যুগের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে, যেখানে মানুষের তৈরি বিধিবিধানের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালিত হচ্ছে। আমাদের সুপারিশ হলো, রাষ্ট্রের সংবিধানের ভিত্তি হতে হবে আল্লাহর প্রদত্ত বিধান। আল্লাহর দেওয়া নির্দেশনাকে ভিত্তি করেই অন্যান্য আইন ও বিধি প্রণয়ন করতে হবে। চলমান জীবনব্যবস্থার যে বিধান কোরআনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ সেগুলো রাখা হবে। বিচার বিভাগে আল্লাহর নাজিল করা বিধান অনুযায়ী বিচারকার্য পরিচালনা করা। এতে অপরাধী যেই হোক না কেন, তার জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। এভাবে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে, বিচারের নামে কোনো অবিচার ঘটবে না, এবং মামলার জট কমে আসবে। এছাড়া, আমাদের প্রস্তাবে প্রাচীন বাংলার প্রচলিত সালিশ ব্যবস্থাকে পুনরায় কার্যকর করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ের অনেক বিরোধ দ্রুত ও সহজেই মীমাংসা করা সম্ভব হবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের চতুর্থ প্রস্তাবনা অর্থনীতির ক্ষেত্রে। বর্তমানে বিদ্যমান সুদভিত্তিক পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কারণে সমাজে গভীর অর্থনৈতিক বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। গুটিকয়েক লোকের হাতে বিপুল পরিমাণ সম্পদজমা হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভাজন এবং সংকট তীব্র হয়েছে। এই ব্যবস্থার ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য সীমিতসংখ্যক সিন্ডিকেটের হাতে কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়েছে, যা দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতির জন্য দায়ী। এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তির জন্য আমরা সুদমুক্ত অর্থনীতির প্রস্তাব দিয়েছি। সবশেষে তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের দেশে যে শিক্ষা ব্যবস্থা চলমান, তা ঔপনিবেশিক যুগের বস্তুবাদী এবং ভোগবাদী চিন্তাধারার ওপর প্রতিষ্ঠিত। বর্তমানে দুটি শিক্ষা ব্যবস্থা চালু আছে। একটি মাদরাসা শিক্ষা এবং অন্যটি সাধারণ শিক্ষা। মাদরাসা শিক্ষার মাধ্যমে ইসলামের বুনিয়াদি শিক্ষা যথাযথভাবে দেওয়া হয় না; বরং বিতর্কিত বিষয়গুলোর ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়, যা মাদ্রাসার আলেমদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করছে। অন্যদিকে, সাধারণ শিক্ষায় ধর্মীয় শিক্ষাকে প্রায় বাদ দেওয়া হয়েছে এবং নৈতিকতা, দেশপ্রেম ইত্যাদি বিষয়ও অনুপস্থিত। ফলে, শিক্ষিতরা দুর্নীতি, অর্থপাচার এবং অন্যান্য অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য আমরা একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছি, যেখানে মাদ্রাসা ও সাধারণ শিক্ষা একত্রিত হয়ে নীতি-নৈতিকতা, ধর্মীয় শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার সমন্বয়ে এমন একটি ব্যবস্থা গড়ে উঠবে, যা দেশপ্রেমিক ও সত্যনিষ্ঠ নাগরিক তৈরি করবে। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন— হেযবুত তওহীদের মহিলা বিভাগের সভাপতি রুফায়দাহ পন্নী, সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক রিয়াদুল হাসান, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক এস এম শামসুল হুদা প্রমুখ।

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা সীমান্তে অভিযান চালিয়ে ০২টি বিদেশী পিস্তল ও ০২ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছে বিজিবি
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা সীমান্তে অভিযান চালিয়ে ০২টি বিদেশী পিস্তল ও ০২ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছে বিজিবি গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল (১৫ মে ২০২৫) দিবাগত